আমরা এখনও বৈষম্যের শিকার
মানিকগঞ্জ থেকে বিমল চন্দ্র রায়
‘আমাদের জন্য অনেকেই কাজ করেন তবে কি করেন বুঝতে পারছি না? দেখে মনে হচ্ছে একজন এগিয়ে দিচ্ছেন আর একজন পিছিয়ে দিচ্ছে।’ গত ৩০ জুন সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস উপলক্ষে স্মৃতি ফাউন্ডেশন,মানিকগঞ্জ এর আয়োজিত অনলাইন সভায় উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন একজন সাঁওতাল শিক্ষার্থী।’
সভায় মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক,উন্নয়ন কর্মী, শিক্ষক, সাংস্কৃতিককর্মী, সাঁওতাল শিক্ষার্থী ও সমাজকর্মীদের অংশগ্রহণ করেন। অনলাইন আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন শিশু সংগঠক ও সাবেক ছাত্রনেতা রুমি আক্তার। স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব বিমল চন্দ্র রায়ের সঞ্চালনায় প্রারম্ভিক আলোচনা শুরু করেন হকার্স শ্রমিক নেতা ও উন্নয়নকর্মী মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল। আলোচনায় অংশ নেন সাঁওতাল শিক্ষার্থী জনি সরেন ও শ্যাময়েল হাঁসদা, কবি, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মী ও ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা মানুষ এর সম্পাদক শফিক সেলিম, অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা: পংকজ কুমার মজুমদার, সমাজবিশ্লেষক ও সমাজকর্মী শফিকুল ইসলাম চপল, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ আকমল হোসেন, মানবাধিকারকর্মী আব্দুল ওয়াহেদ, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী রুহল আলম, শিশু সংগঠক ও সাবেক ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান শিপন ও উন্নয়নকর্মী শাহিনুর রহমান।
আলোচনায় জনি সরেন বলেন, ‘আমি এখন বিভিন্ন হোটেলে ঢুকতে পারি না, আমরা বৈষম্যের শিকার, আমাদেরকে নানানভাবে হয়রানি করা হয়। আমার স্বাভাবিক অধিকার চাই।’ শ্যাময়েল হাঁসদা বলেন, ‘আমি যেখানে বড় হয়েছি সেখানে দেখেছি উন্নয়নের নামে নানান এনজিও আছে। কিন্তু আমাদের জন্য অনেকেই কাজ করে তবে কি করে বুঝতে পারছি না? দেখে মনে হচ্ছে একজন এগিয়ে দিচ্ছে আর একজন পিছিয়ে দিচ্ছে। আমাদের জন্য হোটেলের খাবার বা পাত্র আলাদা কেন? আমরাতো মানুষ? সিধু কানু আমাদের অধিকারের জন্য জীবন দিয়েছে তা কি আমরা পেয়েছি? এখনও আমাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়। আমাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার হার খুবই কম।’
শ্রমিক নেতা মুর্শিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখন আমাদের বৈষম্যে মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম শুরু করে সাঁওতালরা। অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন ছিল তা এখনও আসেনি। ফলে সাঁওতালসহ অপরাপর জনগোষ্ঠীকে বঞ্চনার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।’
শফিকুল ইসলাম চপল বলেন, ‘মানবজাতির ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় কোন বিদ্রোহ হলে নতুন সৃষ্টি হয়। সবলরা অত্যাচার করে এক সময় দুর্বলরা সংগঠিত হয় এবং বিদ্রোহ করে। আদিবাসিরা সবসময় সহজ সরল হন। এজন্য তারা নানান সময়ে প্রতারণা ও বঞ্চনার শিকার হন।’ অধ্যক্ষ আকমল হোসেন বলেন, ‘সমাজে মানুষের সংখ্যার চেয়ে অমানুষের সংখ্যা বেশি। সাঁওতালদের জমিদখল এবং বিভিন্ন মতবাদ দিয়ে বিভাজিত করে রাখা হয়েছে।’ আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে বেশি করে শিক্ষিত হতে হবে। তাছাড়া মুক্তির কোন মাধ্যম দেখা যাচ্ছে না। শিক্ষার মাধ্যমেই মূলধারায় আসতে হবে।’
অনলাইন সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মাহবুবর রহমান, রুহুল আলম, ডা. পংকজ কুমার, শফিক সেলিম প্রমুখ।