মানিকগঞ্জের কৃতি খেলোয়াড় ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বিকাশ চৌধুরী
মানিকগঞ্জ থেকে বিমল চন্দ্র রায়
মানিকগঞ্জ এর নারী অধিকার, শিক্ষা,মর্যাদা, রাজনৈতিক নেতৃত্বে নারী অংশগ্রহণ, খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক চর্চা ও সামাজিক কর্মকান্ডে নারী জাগরণের অগ্রণী ভূমিকায় সাহসিকা নারী শহীদ যোগমায়া চৌধূরীর সন্তান কিংবদন্তী খেলোয়াড় বীর মুক্তিযোদ্ধা বিকাশ চৌধুরী বাচ্চু। বিকাশ চৌধুরী বাচ্চু ১৯৫৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন এ বছরের চলতি মাসের ২০ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।
বিকাশ চৌধুরী বাচ্চু ১৯৬৯ সালে আন্তঃস্কুল এ্যাথলেটিক্সে ২০০ মিটার ও ৪০০ মিটার দৌঁড় ও লংজাম্পে মানিকগঞ্জ থানা ও মহকুমা পর্যায়ে প্রথম ও ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ানশীপ অর্জনের মধ্য দিয়ে খেলোয়াড় হিসেবে তার সাফল্য গাঁথা শুরু হয়। ঢাকা জেলা পর্যায়ে ২০০ ও ৪০০ মিটার দৌঁড়ে ১ম ও ঢাকা বিভাগীয় পর্যায়ে ২য় হন। ১৯৭০ সালে দেবেন্দ্র কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ২০০, ৪০০ ও ১০০ মটিার হার্ডলেস এ প্রথম হয়ে ব্যক্তিগত চ্যাম্পিয়ান হন। ১৯৭৪ সালে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ৪০০ মিটার হার্ডলেস-এ প্রথম ও ৪০০ মিটার রিলেতে দ্বিতীয়। জেলা পর্যায়ে ৪০০ মিটার দৌঁড়ে দ্বিতীয় ও লংজাম্পে দ্বিতীয় ৪০০ মিটার রিলেতে প্রথম। বিভাগীয় পর্যায়ে ১১০ মিটার হার্ডলেস এ দ্বিতীয়, ৪০০ মিটার রিলেতে প্রথম হন। ১৯৭৬ সালে ঢাকা জেলা দলের পক্ষে বাংলাদেশ অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে পিডবিøউডি দলের হয়ে ঢাকার প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগ দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল জীবনের সূচনা হয় তাঁর। ঐতিহ্যবাহী ফুটবল ক্লাব ওয়ারী ক্লাবের অধিনায়কত্ব করেন। ১৯৭০ সালে সালে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান যুব ফুটবল দলের সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত জাতীয় পর্যাযে ফুটবল খেলেছেন।
বিকাশ চৌধুরী বাচ্চু ১৯৭১ সালে মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ও তাঁর নির্দেশে তিন ভাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা দেশ সেরা এ্যাথলেটিক ও ফুটবলার তপন চৌধুরী, প্রবীর চৌধুরী দক্ষিণা ও বিকাশ চৌধুরী বাচ্চু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী মানিকগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে আন্দোলনের সূতিকাগার বিকাশ চৌধূরীর গর্বিত মাতা যোগমায়া চৌধূরীর বাড়িতে সর্বপ্রথম গান পাউডার দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগি কতিপয় দালালেরা। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নিরাপদ আশ্রয় থাকা মডের স্কুলের গুণী শিক্ষক যোগমায়া চৌধুরী আমাদের সকলের কারি পিসির ভাই ভানু গোস্বামী এবং কালি পিসিকে নিরাপদ আশ্রয় থেকে পাক বাহিনী এবং তার দালালেরা ধরে নিয়ে ব্যানট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া ব্রিজের নিচে হত্যা করে ফেলে রেখে যায়। মুক্তিযুদ্ধে জীবন বির্সজন দেন তপন চৌধুরী, তবে বেঁচে যান বিকাশ চৌধুরী বাচ্চু ও বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রবীর চৌধুরী।
বিকাশ চৌধুরী বাচ্চু’র মৃত্যুতে মানিকগঞ্জ বিভিন্ন স্তরে শোকের ছায়া নেমে আসে। সোস্যাল মিডিয়াতে শিক্ষক ও সাংবাদিক অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহম্মেদ নান্নু বিকাশ চৌধুরী বাচ্চু”র ক্রীড়াঙ্গণে বিশেষ ভূমিকা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনের কিংবদন্তী,আমাদের বাচ্চু দা আর নেই… এই শিরোনামে একটি লেখা বিভিন্ন মাধ্যমে পোস্ট করেছেন।
ক্রীড়া সংগঠক ও পরিবেশবাদী সমাজকর্মী এ্যাডভোকেট দীপক কুমার ঘোষ তার ফেসবুকে লেখেন ‘একজন বাচ্চুকে আর কোন দিন পাব না ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বেদনার অশ্রæধারা” হঠাৎ করেই বাচ্চু আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেল। বিকাশ চৌধুরী বাচ্চু একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন শহীন জননীর গর্বিত সন্তান। ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র সেকালের সাহসী সন্তান শহীদ তপন চৌধুরীর কনিষ্ঠ ভাই বিকাশ চৌধুরী বাচ্চু।
ঢাকা পশ্চিমাঞ্চল কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম চৌধূরীর জেষ্ঠ্য সন্তান কানাডা প্রবাসাী বীরমুক্তিযোদ্ধা খালেদ হালিম চৌধুরী একজন অজাতশত্রæর অনন্তযাত্রা নামে বিকাশ চৌধুরী বাচ্চুর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও ক্রীড়া সংগঠক গোলাম ছারোয়ার ছানু তার ওয়ালে লিখেছেন ‘করোনার থাবায় শেষ পর্যন্ত আমার পছন্দের ফুটবলার বাচ্চু দাও চলে গেলেন না ফেরার দেশে।’
এভাবে একে একে অনেকে বিকাশ চৌধুরী বাচ্চুর মৃত্যুতে নানাভাবে শোক প্রকাশ করেছেন এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করেন। আমরাও বিকাশ চৌধুরী বাচ্চরু মৃত্যুতে প্রকাশ করছি, তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি এবং তাঁর পরিবারের প্রতি জানাই আন্তরিক সমবেদনা।