‘তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি’
সাতক্ষীরা, শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
‘আমরা কৃষক মানুষ। কৃষি কাজ করে আমাদের জীবন চলে। আমরা কালমেঘা গ্রামে প্রায় ৫০টি পরিবার বসবাস করি। আর প্রায় সকল পরিবার কৃষি কাজের সাথে সরাসরি যুক্ত। এ কৃষি কাজের মধ্যে বসতভিটায় মৌসুমভিত্তিক নানান ধরনের ফসল চাষাবাদ, বিলে ধান চাষ, পুকুর ও ঘেরে মাছ চাষ করা। সাথে বাড়িতে বিভিন্ন ধরনরে গবাদি পশু হাঁস, মুরগি, কবুতর, গরু, ছাগল, ভেড়া পালন করি। গত কয়েক মাস ধরে উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়। আর তাতেই আমরা কৃষি কাজ থেকে পিছিয়ে পড়েছি। আমাদের ধান চাষের প্রধান মৌসুম ছিলো এই আমন ধান চাষ, যা দিয়ে আমাদের প্রায় পরিবারের ৬ মাসের খোরাকি চলে যেতো। আবার কিছু কিছু পরিবারের ১২ মাসের খোরাকি হতো। বিগত সময়ে আমরা ৩ বার করে আমন ধান লাগানোর চেষ্টা করেছি। তবে ভারী বৃষ্টিতে আমাদের আশা ভরসা ও স্বপ্ন সব ভেঙে দিচ্ছে। তারপরও আমরা আবারও চেষ্টা করছি। এবার যদি আর ধান না হয় তাহলে আমাদের মানুষের যেমন খাদ্যের সমস্যা হবে তেমনি আমাদের গবাদি পশুগুলোও বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে। বসতভিটাগুলোতে এখনো কিছু লাগাতে পারিনি! ’
উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের কালমেঘা গ্রামের কালমেঘা কৃষি নারী সংগঠনের সভানেত্রী কৃষাণী বনশ্রী রানী মন্ডল। গতকাল বারসিক’র সহায়তায় কালমেঘা কৃষি নারী সংগঠনের উদ্যোগে কৃষাণী বনশ্রী রানীর বাড়িতে গ্রামের বর্তমান সমস্যা এবং সমাধানে করণীয় বিষয়ে আলোচনায় উপরোাক্ত কথাগুলো তিনি বলেছেন। আলোচনা সভায় কালমেঘা গ্রামের কৃষক-কৃষাণী ও বারসিক কর্মকতাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
সভায় কৃষাণী অদিতী, যমুনা ও লীলা সরকাররা বলেন, ‘আমাদের সমস্যার কোন শেষ নেই। কোন একটি বাধা কাটিয়ে উঠতে না উঠতে নতুন করে বাধা এসে হাজির হয়। আমাদের এখানে এখন লবণাক্ততা, জলাবদ্ধতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সুপেয় পানির সংকট, বীজের সংকট, গবাদিপশুর রোগবালাই, ফসলের পোকা মাকড়ের প্রভাব, সবজি ক্ষেত সংরক্ষণ, সংগঠনের ঘর না থাকা, নিবন্ধন করতে না পারা এরকম নানান সমস্যা আছে। কিন্তু সব থেকে বড় যে সমস্যা হলো তা জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতার কারণে আমরা চাষীরা আজ বিপদের মুখে।’
তারা আরও বলেন, ‘এবছর আমন মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে এলাকাতে ভারী বৃষ্টি হয়। তাতেই বড় ধরনের জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এবছর আমরা দরিদ্র চাষীরা তিনবার করে ধান লাগানোর চেষ্টা করেছি। এ ধান লাগাতে গিয়ে আমাদের প্রতিবছরের তুলনায় ৩ গুণ খরচ বেশি হয়েছে। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
প্রবীণ কৃষক প্রফুল্ল মন্ডল বলেন, ‘এবছর ধানের পাতা যে কি পরিমাণ নষ্ট হয়েছে তা বলা কঠিন। আমরা এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে ২৮ ধানের পাতা ক্রয় করার চেষ্টা করছি। এই জলাবদ্ধতার মধ্যে লাগাবো সেখানে কোন ধান না পাই কিছু খড়কুটা তো পাবো। যা দিয়ে অন্তত গবাদি পশুগুলো বাঁচিয়ে রাখতে পারি সেই চেষ্টা করছি। আমাদের যে সমস্যা তা ভবিষ্যতে যাতে আর না হয় তার জন্য আগে থেকে সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে।’
অংশগ্রহনকারীরা আরো জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কল্যাণপুর খালের গেট সংস্কার, গেটের পাটা সংস্কার এবং খাল পুনঃখনন এবংকালমেঘা বিলের পানি বের করার জন্য রাস্তা কেটে পাইপ স্থাপন করা জরুরি। তার জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রয়োজন।