গ্রাম আদালত : প্রান্তিক মানুষের  বিচার পাবার  কেন্দ্রস্থল

গ্রাম আদালত : প্রান্তিক মানুষের বিচার পাবার কেন্দ্রস্থল

রাজশাহী থেকে জাহিদ আলী

বাংলাদেশ সরকারের তৃণমুল প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় গ্রামাঞ্চলে স্থানীয়ভাবে সংগঠিত দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য গঠিত আদালতই গ্রাাম আদালত । স্থানীয়ভাবে সাধারণ মানুষের বিচার প্রাপ্তির কথা বিবেচনায় নিয়ে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ ১৯৭৬ সালে প্রণীত হয় গ্রাম আদালত অধ্যাদেশ। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ৯ মে ১৯ নং আইনের মাধ্যমে প্রণীত হয় গ্রাম আদালত আইন। কম সময়ে, অল্প খরচে, ছোট ছোট বিরোধ দ্রুত ও স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যেই গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। নিজেদের মনোনীত প্রতিনিধিদের সহায়তায় গ্রাম আদালত গঠিত হয় বলে এইখানে মিথ্যা স্বাক্ষী দেবার কোন সুযোগ থাকে না বিধায় গ্রাম আদালতের বিচার ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা বাড়ছে।

29136008_10208600385487473_7576589448519876608_o
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, আবেদনকারীর পক্ষের ২ জন প্রতিনিধি ও প্রতিবাদীর পক্ষের ২ জন প্রতিনিধি (১ জন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার এবং ১ জন গণ্যমান্য ব্যক্তি) মোট ৫ সদস্যের সমন্বয়ে গ্রাম আদালত গঠন করা হয়। গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ অনুযায়ী এ আদালত সর্বোচ্চ ৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যমানের ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলার বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে।

29136365_10208600383527424_7138663922910887936_o
গ্রাম আদালতে যেসব বিষয়ে মামলা গ্রহণ ও নিস্পত্তি করতে পারে
ফৌজদারী বিষয়ের মধ্যে রয়েছে চুরি, ঝগড়া-বিবাদ সংক্রান্ত, শক্রতামূলক ফসল বাড়ি বা অন্য কিছুর ক্ষতিসাধন, গবাদি পশু হত্যা বা ক্ষতিসাধন, প্রতারণামুলক বিষয়াদি, শারীরিক আক্রমণ, ক্ষতি সাধন, বল প্রয়োগ করে ফুলা ও জখম করা, গচ্ছিত কোনো মুল্যবান দ্রব্য বা জমি আত্মসাৎ। অন্যদিকে দেওয়ানী বিষয়ের মধ্যে রয়েছে স্থাবর সম্পত্তি দখল পুর্নঃদ্ধার, অস্থাবর সম্পত্তি বা তার মূল্য আদায়, অস্থাবর সম্পত্তি ক্ষতিসাধনের জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়, কৃষি শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি পরিশোধ ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা, চুক্তি বা দলিল মূল্যে প্রাপ্য টাকা আদায়।

গ্রাম আদালতে বিচার পাবেন যেভাবে
গ্রাম আদালতে বিচার পেতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে হয়। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে ৪ টাকা এবং ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে ২ টাকা ফি দিয়ে বিবদমান যে কোনো পক্ষ চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে পারেন। সেই আবেদনে ইউনিয়ন পরিষদের নাম, আবেদনকারীর নাম ও পরিচয়, অভিযোগ এবং তার প্রার্থিত প্রতিকার সুনির্দিষ্টভাবে লিখতে হয়। আবেদন পাওয়ার পর চেয়ারম্যান উপরে উল্লিখিত নিয়মে পাঁচজন সদস্যের আদালত গঠন করবেন। এরপর পক্ষদ্বয়ের শুনানি এবং অন্যান্য বিচার প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ্যে রায় প্রদান করবেন।

happy wheels 2