মানিকগেঞ্জ রবীন্দ্রজয়ন্তী ও বিশ্ব মা দিবস উদযাপন
মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার ও ঋতু রবিদাস
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রণাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মজয়ন্তী ও বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে বারসিক মানিকগঞ্জ রিসোর্স সেন্টারে গত ২৫শে বৈশাখ ১৪২৯ (৮ মে ২০২২) আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন এ্যাড: দীপক কুমার ঘোষ।
আলোচনায় এ্যাড: দীপক কুমার ঘোষ কলেন, “আজ বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মজয়ন্তী। রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে অসাধারণ কৃতিত্ব রেখেছেন। তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক। তিনি ব্রাক্ষ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেও তিনি ব্রাক্ষ্মণদের তথাকথিত নিয়ম-নীতি মানতেন না। তিনি একজন কৃষক পরিবারে গিয়ে কৃষকের রান্না করা খাবার তিনি খেয়েছেন। কৃষকদের ফসল উৎপাদনের জন্য সাহায্য করেছেন। রবীন্দ্রনাথ কলিকাতায় জন্ম গ্রহণ করেও বেশির ভাগ সময় বাংলাদেশে কাটিয়েছেন এবং বিভিন্ন কবিতা, ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক, গান লিখেছেন। তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর গান মানুষকে প্রেরণা যুগিয়েছে।”
সমাজকর্মী অব: অধ্যক্ষ আশুতোষ রায় বলেন, ‘যার অনুপ্রেরণায় আমি সমাজ হিসেবে কাজ করি তিনি হলেন আমার মা। যার সবকিছ’ সহ্য করার ক্ষমতা আছে তিনি হলেন মা। সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ আমাদের মা।” সমাজকর্মী দেলোয়ারা বেগম বলেন, ‘মা সম্পর্কে আমার কোনো স্মৃতিই মনে পড়ে না। আমার বয়স যখন ৪/৫ মাস তখন আমার মা মারা যান। ফুপু-খালাদের ছোট বেলায় মা বলে ডাকতাম। সব ধর্মেই আছে মায়ের পায়র নিচে বেহেশত। আমি হেল্থ-এ চাকুরী করেছি। অনেকের সাথে ভালো সম্পর্ক হয়েছে। এখনো মাঝে মাঝে সেই গ্রামের মানুষের কাছে যাই। বয়স্ক মানুষের পাশে বসি। তাদের সাথে কথা বলি। ভাবি তাদের বয়স হয়েছে যদি পরে আর দেখা না হয়। মায়ের আদরের কোনো তুলনা হয়না।’
অব: অধ্যক্ষ মোর মনির হোসেন বলেন, ‘আমি ২০১৯ সালে কলকাতা গিয়েছিলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি দেখতে। রবীন্দ্রনাথের গান শুনে সারা রাত জেগে থাকা যায়। তিনি ব্রিটিশদের দেওয়া নাইট উপাধী ১৯১৯ সালে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি নদী পথে তাঁর কবিতার রূপ খুঁজেছেন। তাঁকে নিয়ে আলোচনা করা হলেই নতুন নতুন তথ্য পাওয়া যায়। যতবারই তাঁর গান শুনবো ততবারই তাঁর প্রেমে পড়বো।”
সমাজকর্মী ইকবাল খান বলেন, ‘মা দিবসে একটা গল্প বলতে চাই। এক কৃষক তার মাকে খুব অত্যাচার করতো। তাই তার মা সবার কাছে বিচার চাইতেন। একদিন মাতবর বললো গর্ত করে তার ভিতরে কুকুর নামিয়ে যেন তার ছেলেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। কুকুরের কথা শুনে তার মা চিৎকার করে ছেলেটির কাছে যান এবং ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন। ছেলেকে বাঁচান। মা এমনি হন। ১৯৭৪ সালে আমি শাহাজাদপুর যাই রবীন্দ্রনাথের আমাদের ছোট নদী কবিতার নদীটি দেখার জন্য।’ শিক্ষক মো: মজিবুর রহমান বলেন, “মায়ের বিকল্প নাই। নিরপেক্ষতা মায়ের কাছে শিখতে হয়। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অসাম্প্রদায়িক । তাঁর গান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালিকে প্রেরণা যুগিয়েছে। আজও তাঁর গান মানুষকে ঠিক একইভাবে প্রেরণা যোগায়।’ বারসিক’র প্রোগ্রাম অফিসার রাশেদা আক্তার বলেন, “মা দিবসটি পালনের যথার্থতা আছে বলে আমি মনে করি। যদিও মাকে ভালোবাসার কোনো দিবস লাগে না। তবুও এই বিশেষ দিনটিতে মাকে ভালোবাসার কথা বিশেষভাবে বলা যায়। কোনো গিফট দেওয়া যায়। মায়েরা খুশি হন। মায়ের অবদান বলে শেষ করা যায় না। আজকের এই দিনে বিশ্বের সকল মাকে শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা জানাচ্ছি। সেই সাথে সকলের প্রতি আহবান আসুন মায়েদের অবহেলা নয়, শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি।”
এর আগে আলোচনা সভার শুরুতেই কর্মসূচির লক্ষ উদ্দেশ্য তুলে ধরে স্বাগত বক্তব্যে বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, “আজ বিশ^ কবি রবীন্দ্রনাথের ১৬১তম জন্মজয়ন্তী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অসংখ্য গল্প, কবিতা, গান, নাটক, ছোটগল্প, সাহিত্য লিখেছেন। তিনি গীতাঞ্জলী রচনা করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তার অবদান বলে শেষ করা যাবে না। অন্যদিকে আজকে বিশ^ মা দিবস। রবীন্দ্রনাথও কোনো এক মায়েরই সন্তান।’
উল্লেখ্য প্রাচীন গ্রিসে বিশ্ব মা দিবস পালন করা হলেও আধুনিককালে এর প্রবর্তন করেন এক মার্কিন নারী। ১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আনা জারভিস নামের নারী মারা গেলে তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন।
ওই বছর তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃদিবস হিসেবে পালন করেন। ১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলের বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন।
১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে ‘মা’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা। এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, রাশিয়া ও জার্মানসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে।