বীজ হলো আমাদের সম্পদ
সাতক্ষীরার, শ্যামনগর থেকে বিশ্বজিৎ মন্ডল
‘ভালো ফলনের জন্য ভালো বীজের দরকার। সেটা বাজরের বীজ হোক কিংবা বাড়ির বীজ। তাই বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য চেষ্টার কোন শেষ নেই। আমরা কোন স্থান থেকে ভালো কোন বীজ এনে লাগিয়ে বীজ সংগ্রহ করার আগে নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছি। কখন অনাবৃষ্টি কখনো অতিবৃষ্টি সাথে আছে লবণাক্ততা সব কিছু মানিয়ে নিয়ে আমাদের টিকে থাকতে হচ্ছে। আর এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আমরা আমাদের সম্পদ টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। এ সম্পদের মধ্যে অন্যতম একটি সম্পদ হলো বীজ। আমরা কৃষক মানুষ কৃষির উপর আমাদের নির্ভরশীলতা। তাই কৃষিকে টিকিয়ে রাখার জন্য বীজ দরকার। আমরা এখন প্রায় বাড়িতে কম বেশি বীজ সংরক্ষণ রাখার চেষ্টা করছি। বাজারের বীজের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাচ্ছি। কারণ আমরা বাজার থেকে ভালো বীজ ভালো দামে কিনলে তা অনেক সময় ফলন হচ্ছে আবার অনেক সময হচ্ছে না। এছাড়াও বারবার আমাদের এলাকায় নানান ধরনের দুর্যোগ হচ্ছে তাতে আমাদের ফসলও বারবার নষ্ট হচ্ছে। এতে করে কতবার আর বীজ কিনবো আমরা! যদি বাড়িতে নিজের কাছে বীজ রাখতে পারি তাহলে তো ইচ্ছে মতো লাগাতে পারবো। তাই এখন নিজেরা বাড়িতে বীজ রাখার চেষ্টা করছি এবং নারী সংগঠনের মাধ্যমে বীজ ব্যাংক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করছি। কারণ বীজ হলো আমাদের সম্পদ।’
উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন শ্যামনগর সদর উপজেলার কালমেঘা গ্রামের কৃষাণীরা। গতকাল বারসিক’র সহায়তায় এবং কালমেঘা কৃষি নারী সংগঠনের উদ্যোগে নারী সংগঠনের কার্যালয়ে বীজ সংরক্ষণ ও পরিচর্যা বিষয়ক প্রশিক্ষণে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন তারা।
উক্ত প্রশিক্ষণে কালমেঘা গ্রামের ১৫ জন কৃষক-কৃষাণী অংশগ্রহন করেন। প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসাবে তথ্য সহভাগিতা করেন উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ সিারজুল ইসলাম।
প্রশিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সবজি যেমন পরিচর্যা করতে হয় তেমনিভাবে বীজেরও পরিচর্যা করতে হবে। তাই বীজ সংরক্ষণের জন্য গাছের ভালো ফলটি আগে নির্বাচন করতে হবে। সেটি কোন সময় হয়েছে, কোন পোকা লেগেছে কিনা, গাছে ভালো করে পাকানো হয়েছে কিনা, উঠানোর পরে সেটি কয়টি রোদ দেওয়া হয়েছে, কিভাবে কোন পাত্রে তা সংরক্ষণ করছি। এসব বিষয়গুলো ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে। বীজ যদি ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায় তাহলে ভালো ফলনও পাওয়া যাবে। তাই ভালো উৎপাদনের জন্য আগে বীজের গুণগত মান ভালো হওয়া চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘সবসময় মানসম্মত বীজই ব্যবহার করতে হবে। তার জন্য বিশুদ্ধ বীজ হতে হবে। সেক্ষেত্রে বীজ উজ্জল, সুন্দর, সতেজ, পুষ্ট এবং বড় দানা সম্পন্ন বীজ হতে হবে। বীজের মধ্যে অন্য জাতের মিশ্রণ আছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে। যে বীজই হোক না কেন বীজ ফল ভালোভাবে পাকার পরে তা সংগ্রহ করতে হবে। যথাসময়ে বীজ সংগ্রহ করতে না পারলে বীজের মান খারাপ হতে পারে। বীজ সংরক্ষণের পরে তা মাঝে মধ্যে বের করে রৌদ্রে শুকাতে হবে। এছাড়াও সব রকমের ফসল চাষে জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক এর ব্যবহার বাড়াতে হবে।’
সব শেষে অংশগ্রহণকারীরা কিছু প্রস্তাব রাখেন। প্রস্তাব গুলো হলোঃ বীজ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ আয়োজন, বীজ মেলা, বীজবাড়ি তৈরি, বীজ ব্যাংক তৈরি, অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর, সবজী চাষের উপকরণ সহায়তা।