বহুত্ববাদী সমাজ বিনির্মাণে বৈষম্যমুক্ত সহনশীল সমাজ গঠনের অঙ্গীকার
মানিকগঞ্জ থেকে কমল চন্দ্র দত্ত
মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার কাটিগ্রাম গ্রামে রাজবংশী উন্নয়ন সংগঠনের উদ্যোগে ও বারসিক সহায়তায় বহুত্ববাদী সমাজ বিনির্মাণে বৈষম্যমুক্ত সাংস্কৃতিক ও সহনশীল নাগরিক চাই এ বিষয়ের উপর নাগরিক সংলাপ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সংলাপে আটিগ্রাম ইউনিয়নের কাটিগ্রাম ও কুমুদপুর গ্রামের রাজবংশী, মনিঋষি, সূত্রধর, সাহা ও শীল সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করেন।
সংলাপ ও মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন কাটিগ্রাম রাজবংশী উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি ভাগ্য রাণী রাজবংশী। সংলাপ ও মতবিনিময় সভায় আলোচনা করেন বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল চন্দ্র রায়, মানিকগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সদস্য মনোয়ার হোসেন মনির, আটিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. সোহরাব হোসেন, খোকন চন্দ্র রাজবংশী, সুধীর রাজবংশী, গোবিন্দ মনিদাস, রামচরণ মনিদাস ও বারসিক কর্মসূচী কর্মকর্তা কমল চন্দ্র দত্ত প্রমুখ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, ‘বহুত্ববাদী সমাজ বিনির্মাণে সর্বাগ্রে প্রয়োজন বৈষম্যমুক্ত সহনশীল সমাজ। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলার যেমন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তেমনি কৃষক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি, চামার, ঝাড়–দার, দর্জি ও কুটির শিল্পীরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রত্যেকেই আমরা প্রত্যেকের উপর নির্ভরশীল। এজন্য জাতিগত কুসংস্কার থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’ তাঁরা আরও বলেন, ‘জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ইত্যাদি ভুলে গিয়ে মানুষকে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে। সকল শ্রেণির ও পেশার মানুষকে মূল্যায়ন করতে হবে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে হবে, মর্যাদা দিতে হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিজেদের দুর্বল ভাবলে চলবে না, সংখ্যালঘু ভাবলে চলবে না। কারণ, রাষ্ট্রের সংবিধান সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ ও সমঅধিকার দিয়েছে।’
সংলাপে রাজবংশী ও মনিঋষিগণ বলেন, ‘আমরা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে বারসিক’র সহযোগিতায় কাটিগ্রাম ও কুমুদপুর গ্রামে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলেছি। সেখানে শিশু শিক্ষার্থীরা পাঠ গ্রহণ করছে। বড়দেরও শিক্ষিত করে গড়ে তোলার যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। সামাজিক কুসংস্কার ও বৈষম্য দূরীকরণে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে কাজ করা হবে। সমাজে নিজেদের অবস্থান নিজেদের তৈরি করে নিতে হবে। এজন্য শক্তিশালী সংগঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বহুত্ববাদী সমাজ বিনির্মাণে বৈষম্যমুক্ত সহনশীল সমাজ গঠনে আলোচনার ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ জেলা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ঐক্য পরিষদ গঠনের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট আঞ্চলিক কমিটি গঠন করেন।