হরিরামপুর চরাঞ্চলে স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
চরাঞ্চরের মানুষের এসব স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বারসিক ও হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর সহযোগিতায় সম্প্রতি হরিরামপুরের ৩টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী মধ্যে স্বাস্থ্য ক্যাম্পের মাধ্যমে তাদের চিকিৎসাপত্র ও কিছু প্রয়োজনীয় ঔষুধপত্র প্রদান করা হয়েছে।
চিকিৎসা সেবা প্রদানে সহযোগিতা করেন ডা. সোহেল রানা তৌফিকুল করিম, মুনঞ্জুরুল আলম, কায়েদ ইবনে আজাদ, ফার্মাসিষ্ট সেলিম হোসেন ও মিজানুর রহমানসহ আরো অনেকে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পুর্বে ক্যাম্পগুলো স্বাস্থ্য সচেতনতামুলক আলোচনা করা হয়। সচেতনমুলক আলোচনার মাধ্যমে একদিকে চরবাসি মানুষের সচেতনতা তৈরি হচ্ছে অন্যদিকে তারা এলাকার স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে তাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়াও সরকারি সেবা প্রাপ্তিতে চরবাসীরা উপকৃত হচ্ছেন। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল, কর্নেক মালেক মেডিকেল কলেজসহ সরকারী প্রতিষ্ঠানে যে ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়, সে বিষয়ে সচেতন করা হয়। এবং চরাঞ্চলে যে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে সেখানে গ্রামের মানুষ সেবা নিতে যান এবং যারা সেবা প্রদান করেন তার যেন নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন সে বিষয়েগুলো তুলে ধরা হয়।
হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষ নদী পাড়ি দিতে যেতে হাসপাতালে যেতে হয় বলে অনেকে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারেন না। তার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা অন্যতম। চরের মানুষ যেন নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন সে জন্য নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ডাক্তার রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন জরুরী সময় দুর্যোগকালীন সময়ে স্বাস্থ’্য ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হবে।’
এছাড়া বারসিক এর সহায়তা হরিরামপুর চরাঞ্চলে ২০ জন ধাত্রী মাতাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। তারা চরের প্রসূতি ও গর্ভবর্তী মায়েদের বিশেষ সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
সুতালড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মাসুদ বলেন, ‘সুতালড়ী ইউনিয়নে কোন কমিউনিটি ক্লিনিক বা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নাই। এই এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে হরিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেতে হয়। বর্ষাকালে গর্ভবর্তী নারী, প্রবীণ মানুষ শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।’ চরদুবাইল গ্রামের কৃষক সাবিনা বেগম বলেন, ‘সুতালড়ী, আজিম নগর ও লেছড়াগঞ্জ এই তিন ইউনিয়নের মানুষ মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচিছিন্ন। চরে কোন হাসপাতাল না থাকার কারণে প্রান্তিক মানুষ চিকিৎসা সেবা নেওয়া সম্ভব হয় না।’
অন্যদিকে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘চরে বারসিক’র উদ্যোগে স্বাস্থ্য ক্যাম্প করার কারণে অনেক মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে এবং তারা এলাকার যে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে সেখানে মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা সেবা নিতে যাচ্ছে।’ হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. মেহেরুবা পান্না বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষেন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারী সেবা প্রদানে পাশাপাশি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে।’
নটাখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষ অসুস্থ হলে এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিক, গ্রাম্য চিকিৎসক হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মানিকগঞ্জ ও পাশের জেলা ফরিদপুর গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। চরাঞ্চলের মানুষের সেই সেবা নিতে গেলে অনেকের পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে স্কুল পর্যায়ে একজন এমবিবিএস চিকিৎসক দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি পরামর্শ ও চিকিৎসা পত্র প্রদান অবশ্যই একটা ভালো উদ্যোগ।’ এছাড়াও তিনি যদি সম্ভব হয় প্রতি মাসে একবার করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনমূলক আলোচনা ও চিকিৎসাপত্র দিলে চরাঞ্চলে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে বলে মনে করেন।
বারসিক প্রোগ্রাম অফিসার মুকতার হোসেন বলেন, ‘বারসিক হরিরামপুর চরাঞ্চলে মানুষের জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়নে স্বাস্থ্য সেবা, নিরাপদ খাদ্য, পরিবেশ, দুর্যোগকালীন সময়ে করণীয়, চরের ধাত্রী মাতাদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।
উল্লেখ্য, হরিরামপুর মূলভূমি থেকে এক ঘণ্টা পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে যেতে হয় চরাঞ্চলের আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নে। মূলভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে হরিরামপুর চরাঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে চরাঞ্চলে ৩টি ইউনিয়নে একটি উপস্বাস্থ্য ও ২টি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও তা চরাঞ্চলের জনগোষ্ঠির জন্য পর্যাপ্ত নয়। বিশেষ করে শিশু, নারী ও প্রবীণ মানুষ নিয়ে বিশেষ করে রাতের বেলায় গর্ভবর্তী নারীদের নিয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয়। এলাকার মানুষ অসুস্থ হলে গ্রামের পল্লী চিকিৎসকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। এছাড়া বড় ধরনের অসুস্থ হলে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা যেতে হয়। হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলে নি¤œ ভুমি হওয়ায় প্রতিবছর বন্যায় এই এলাকার মানুষের মধ্যে চর্মরোগ, পেটেরপীড়া, সর্দিজ¦র, ডায়রিয়া, গ্যাসষ্ট্রিক, শরীর ব্যথা, হাত পা ব্যথা খুজলী-পাচড়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।