রিতা রানীর সংগ্রামী জীবনের দিনগুলো
সাতক্ষীরা থেকে ফাতিমা আক্তার
পারস্পারিক উন্নয়নে স্বামীর সাথে তাল মিলিয়ে নারীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। সংসারের যাবতীয় গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি আয়বৃদ্ধিমুলক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকার প্রচেষ্টা করেন তাঁরা। ‘স্বামীর আয়ে সংসার ঠিকমত চলে না। এজন্য স্বামীর সাথে নানা ধরনের কাজে আমি সহযোগিতা করি। সেই সাথে পরিবারের আয় যাতে বাড়ে সেই ধরনের কাজ করার চেষ্টা করি। উরোক্ত কথাটি বললেন রিতা রানী।
বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বুড়িগোয়াীলনী গ্রামের কৃষাণী রিতা রানী (৩৮) জীবিকার তাগিদে নানা ধরনের কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করেছেন। বিয়ের পর স্বামীর অভাবের সংসারে এসে তিনি জীবনযুদ্ধে জড়িয়ে সংসারের উন্নয়ন চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েন। পর পর দুটি কন্যা সন্তান পরিবারে যুক্ত হলে সংসারের খরচের পরিমাণ বেড়ে যায়। তার বড় মেয়েকে একই ইউনিয়নে বিয়ে দিয়ে এখন ১ মেয়ে ও শ^াশুড়ীসহ ৪ জনের সংসার তাঁর। তার স্বামী কেশব মল্লিক (৪১) দিনমজুরের কাজের পাশাপাশি সুন্দরবনের নদীতে মাছ-কাঁকড়া ধরেন। স্বামীর সাথে কাজে সহযোগিতার পাশাপাশি বাড়িতে কয়েকটি হাঁস-মুরগি পালন করে চলছিল তাদের সংসার। এরপর পরিচয় ঘটে বারসিক’র সাথে।
২০২১ সালে অক্টোবর মাসে নেটজ পার্টনারশিপ ফর ডিভেলপমেন্ট জাস্টিস’র সহযোগিতায় বারসিক’র বাস্তবায়নে পরিবেশ প্রকল্প শুরু হলে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বুড়িগোয়ালিনী গ্রামে টিয়া সিএসও দলে যুক্ত হয় রিতা রানী। যুক্ত হওয়ার কিছুদিন পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে তার পারিবারিক ও ব্যবসায়িক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রেক্ষেতে উৎপাদনশীল সম্পদ হিসেবে তাকে দুটি ছাগল ও ৪টি মুরগি সহযোগিতা করা হয়। সম্পদ সহযোগিতা পাওয়ার পরে বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে নানা ধরনের কৃষি প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। যে কারণে নিজেকে উন্নয়নমুখী ও আরো সমৃদ্ধ করার সুযোগ পান তিনি।
তাদের ৮ শতক বসতি ভিটায় লবণাক্ত পরিবেশে তেমন কৃষিকাজ করতে পারেন না। তবে বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির লতানো সবজি চাষ করতে পারেন। বারসিক থেকে সহযোগিতা প্রাপ্ত দুটি ছাগল থেকে ৪টি ছাগল হলে রিতা রানী কিডনীর সমস্যার ধরা পড়ে। তখন ছাগলগুলো দেখাশুনার মত মানুষের অভাব দেকা দেয়। তখন তার ছাগলগুলো সব বিক্রি করে ৬টি ভেড়া ক্রয় করেন, এবং একটি নৌকা তৈরির কাজ করেন। বাকি টাকা নিজের চিকিৎসা কাজে ব্যয় করেন। এখন তার নিজের ভেড়াগুলো তার শ^শুড়ের ভেড়ার খামারের সাথে একই ঘরে থাকে এবং তার শ^শুর ও শ^াশুড়ী দেখাশুনা করে। রিতা ও কেশব দম্পতির বাড়িতে গিয়ে সরেজমিনে জানা যায়, তাদের একটি গোয়াল ঘর তৈরির ইচ্ছে আছে। এরপর নদীতে পোনা ধরে, ভেড়া বিক্রি করে, এবং টাকা সঞ্চয় করে একটি গরু কিনবেন।
নিজেদের আয়ের বড় একটি অংশ রিতা রানীর চিকিৎসা কাজে ব্যয় হচ্ছে। তিন সুস্থ হলেই আবার উন্নয়ন কাজে নেমে পড়বেন এমনটাই জানালেন রিতা রানী। রিতা রানী ও কেশব মল্লিক দম্পতি যেভাবে নিজের উন্নয়ন কাজে যুক্ত করেছেন, এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে খুব সহজেই তাদের আর্থ-সাামজিক উন্নয়ন হবে এবং মুক্তি মিলবে দারিদ্রতা থেকে।