জ্বালানি বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন ধুমঘাটের নারীরা
শ্যামনগর থেকে দিলরুবা ইয়াসমিন
বর্তমান সময়ে জ্বালানি সংকট নিয়ে চিন্তিত পুরো এলাকা। বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম বেড়েই চলেছে প্রতিনিয়ত। জ্বালানির দামের কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত মানুষের। জ্বালানি সংকট মেটাতে ও পারিবারিক স্বচ্ছলতা আনতে গ্রামের নারীরা গরু-মহিষের গোবর কাজে লাগিয়ে ঘুটে ও মশাল দিয়ে থাকে।
ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ধুমঘাট গ্রামের প্রতিটা বাড়িতে কম বেশি গরু-মহিষ পালন করে থাকে। বর্ষা মৌসুমে তারা গোবর গর্তে ভরে রাখে। আর সেই সংগ্রহকৃত গোবর দিয়ে নারীরা তৈরি করেন মশাল, ঘুটে, চেলি। কোনটা গোল আবার কোনটি লম্বাটে। তবে গ্রামের নারীরা বিক্রয়ের জন্য হালকা লম্বাটে সাইজের ঘুটে বেশি তৈরি করেন। এর কারণ ঘুটে তৈরির জন্য মশালের মত কোন কাঠের প্রয়োজন পড়েনা। সহজে মাঠে, দেওয়ালে, রাস্তার পাশে এবং উঠানে গোবর ও পানি মিশিয়ে হাতের সাহায্যে তৈরি করা যায়।
এ প্রসঙ্গে প্রবীণ বৃদ্ধা পার্বতী (৬২) জানান, আমাদের গ্রামে প্রত্যেকের বাড়িতে গরু, ছাগল, ভেড়া পালন করা হয়। ধান মাড়াইয়ের পর তেমন কোন কাজ থাকেনা নারীদের। উপার্জনও হয়না। তাই নারীরা এই সময়ে তাদের বাড়তি রোজগারের জন্য গোবরের জ্বালানি তৈরি করে থাকেন। জ্বালানি রোদে শুকিয়ে বিক্রয় করা হয় বস্তা, কুড়ি বা শ’ হিসাবে। প্রতি বস্তা ঘুটের দাম রাখা হয় ৮০ টাকা করে। মশাল এক কুড়ির দাম ৩৫ টাকা। এভাবে জ্বালানি বিক্রয় করে নারীরা অর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছে।
আনজুয়ারা বেগম (৪০) জানান, বর্তমান সময়ে নিত্য বাজার করে আনাটা খুবই কষ্টের। আবার সবার তো গ্যাস ও কাঠ কেনার মত সামর্থ্য নেই। শুকনার সময় বিলে সবার গরু মাঠে ছাড়া থাকে। যাদের গরু, মহিষ নেই তারা প্রতিদিন মাঠ থেকে গোবর সংগ্রহ করে। প্রতিদিন বিলের থেকে গোবর কুড়িয়ে জ্বালানি তৈরি করে নিজেদের জ্বালানির চাহিদাও মিটায় আবার কিছু বিক্রয় করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হচ্ছে।
সুমিত্রা রানী (৩৬) জানান, গাছপালা কমে যাওয়ায় জ্বালানি কাঠের মণ কিনতে হয় ২৫০ টাকা দিয়ে, যা তিন বেলা রান্না করতে গেলে ৩-৪ দিন হয়। জ্বালানি শেষ হলে নারীদের বেশি চিন্তার মধ্যে পড়তে হয়। পরেরদিন পরিবারের মুখে কীভাবে খাবার তুলে দেবে সেই চিন্তা থেকে শুকনোর সময় পাতালতা দিয়ে রান্না করেন। পরবর্তী সময়ের জন্য গোবরের জ্বালানি তৈরী করে মাচায় সংরক্ষণ করে রাখেন। অল্প কাঠের গুঁড়ার সাথে ঘুটে বা মশাল দিয়ে জ্বাল দিলে জ¦ালানিও কম লাগে সাথে সাথে অল্প সময়ের মধ্যে রান্না শেষ করে অন্য কাজে যেতে পারেন।
ধুমঘাটে গেলে দেখা মেলে মাঠ ভরা গোবরে ঘুটে শুকাতে দিয়েছেন নারীরা। শুকনা জ্বালানি তাদের থেকে বিভিন্ন আয়ের মানুষ ক্রয় ও করছেন। পরিবেশবান্ধব এই জ্বালানি বিক্রয় করে অনেকে তাদের পারিবারিক স্বচ্ছলতা আনছেন। নারীরা বিভিন্নভাবে পুরুষের পাশাপাশি থেকে পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করছে।