সাতক্ষীরায় বাসযোগ্য ও পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলার আহবান
গাজী মাহিদা মিজান, সাতক্ষীরা থেকে
জলবায়ু সংকটে নিপতিত সাতক্ষীরায় বাসযোগ্য ও পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, সাতক্ষীরা শহরে নেই পর্যাপ্ত জলাভূমি, গাছপালা, উদ্যান ও পার্ক। যতটুকু আছে তাও ভরাট, দখল ও দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ফলে বিলীন হতে বসেছে এখানকার প্রাণবৈচিত্র্য। সেই সাথে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে বাড়ছে বায়ু দূষণ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করা না গেলে সাতক্ষীরা শহর তার বাসযোগ্যতা হারাবে।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সাতক্ষীরা শহরের ম্যানগ্রোভ সভাঘরে বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক আয়োজিত ‘সাতক্ষীরা শহরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সংকট সমাধানের উপায়’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। বক্তারা আরও বলেন, পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগানো ও জলাধার রক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু আইন প্রয়োগ করেও পুকুর জলাশয় ভরাট বন্ধ করা যাচ্ছে না। সাতক্ষীরা পৌর এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না রেখেই ঘেরে মৎস্য চাষ করা হচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমে একটা দীর্ঘসময় পৌর এলাকার বেশ কিছু এলাকা জলাবদ্ধ থাকে। শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাণ সায়ের খাল দখল দূষণ ও পরিকল্পিতভাবে খননের অভাবে পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।
সংলাপে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম। সংলাপে ধারণাপত্র পাঠ করেন বারসিকের সহযোগী কর্মসূচি কর্মকর্তা গাজী মাহিদা মিজান। বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম, সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল করিম, পরিবেশ কর্মী অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, সনাক-সাতক্ষীরার সভাপতি হেনরী সরদার, উন্নয়ন কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, সিনিয়র সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জি, মিজানুর রহমান, এম কামরুজ্জামান, গোলাম সরোয়ার, আসাদুজ্জামান আসাদ, আহসান রাজীব, গীতিকার মোকাম আলী খান, উদীচীর শেখ সিদ্দিকুর রহমান, নাগরিক নেতা আলী নূর খান বাবুল, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, সাতক্ষীরা পৌর কাউন্সিলর শেখ মারুফ হোসেন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর অনিমা রানী ও নুরজাহান নুরী, শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের মুশফিকুর রহিম ও তামান্না পারভীন, প্রথম আলো বন্ধু সভার সভাপতি কর্ন বিশ্বাস কেডি, বিপ্লব হোসেন প্রমুখ।
সংলাপে তাপদাহ কমানো ও সকল প্রাণের জন্য পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে সরকারিভাবে অন্তত ২০ ভাগ বনভূমি এবং ১৫ ভাগ জলাভূমি রক্ষা করা, বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত পার্ক, উদ্যান এবং খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা, শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে স্থানান্তরিত মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, পয়ঃনিষ্কাশন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, শহরে পথচারীদের হাঁটার জন্য ফুটপাত ও বাইসাইকেল লেন তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, শহরের দরিদ্র মানুষের জন্য আবাসন বা সামাজিক আবাসন নিশ্চিতকরণ, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি হাসপাতাল/চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ, যুবদের বিশেষ করে নারীদের জন্য আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুবিধা নিশ্চিতকরণ, উন্নয়ন পরিকল্পনায় সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মতামত গ্রহণ ও পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান, জলবায়ু সহনশীল ও পরিবেশবান্ধব নগর তৈরীর জন্য স্থানীয় যুব সমাজের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিকরণ, অপরিকল্পিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ করা, অবকাঠামো তৈরীতে পোড়া ইট ও গ্লাসের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশসম্মত ব্লক ও পরিবেশ বান্ধব সামগ্রী ব্যবহার করা, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানি দূষণ, তাপদাহসহ ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত বিপর্যয়, বন্যা ও জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার জন্য শহরে পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ, পুকুর, খাল ও ডোবা খনন, জলাধার তৈরী ও নগরের জলাভূমিকে দখলমুক্ত ও রক্ষার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ, পরিবেশবান্ধব সবুজ জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের সুপারিশ করা হয়।