মনের আনন্দের জন্য লিখি
মানিকগঞ্জ থেকে এম. আর. লিটন
আমদের আশেপাশে অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা অনেক প্রতিভাবান। কিন্তু অনেকসময় সেসব মানুষ থেকে যাচ্ছেন লোক চোখের আড়ালে। হয়তো, আমরা তাদের কোন খোঁজ রাখছি না। অনেক সময় হয়তো তাদের অবহেলার চোখে দেখছি!
আমি এই লেখায় তেমনই একজনের কথা বলছি, তিনি হলেন একজন প্রান্তিক কৃষক মো. চাঁন মিয়া (৬৬)। লোকে তাকে চ্াঁন গাজী হিসেবে চেনেন। মানিকগঞ্জ স৬দর থানার বাসুদেবপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন আনুমানিক ১৯৫০ সালে। তাঁর পিতা মৃত মো. আফাজ উদ্দিন।
চাঁন গাজী ফসলের মাঠে একজন নিবেদিত সাধক। কখন রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে অন্ন জোগাছেন নিজের পরিবার ও দেশের মানুষের জন্য। আমরা কি, সেই চাঁন গাজীর খোঁজ রাখছি?
কৃষক চাঁন গাজীর একটি কবিতা শুনেছিলাম কোন এক প্রতিবাদী কৃষক বন্ধনে। সেই কৃষক বন্ধনের উপস্থাপকের কণ্ঠে। কবিতাটি ঠিক মনে পড়ছেনা কিন্তু নামটি তার মনে ছিল। তার সাথে আমার পরিচয় হলো আবার কোন এক কৃষক বন্ধনে। তারপর তার সম্পর্কে জানতে পারি। আমি জানলাম, তিনি একজন কবি, তিনি কবিতা লিখেন।
চাঁন গাজীর সাথে আমার আবার দেখা হলো মানিকগঞ্জ আইনজীবি সমিতির ৪র্থ তলায়। তার সাথে আমার আলোচনা হলো কবিতা লেখা ও তার ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে। তিনি বললেন, “মনের আনন্দের জন্য লিখি। কবিতা লিখে মনের শান্তি দেই, মনের বিষন্নতা দূর করি, আমি বিভিন্ন বিষয়ে কবিতা লিখি।” তিনি আরও বলেন, “মানুষ কবিতা লিখে তিনটি কারণে, ১. যন্ত্রণায়, ২.আনন্দে, ৩. লোভে।”
তিনি তার জীবন সম্পর্কে আরও বললেন, “৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। পরিবারের বড় ছেলে আমি। তাই ভাই-বোনদের মানুষ ও লেখাপড়া করাতে গিয়ে নিজে লেখাপড়া করতে পারিনি। আমাদের বাড়ি ছিল ধলেশ্বরী নদীর চরে। তখন জমিতে ফসল ঠিকমত হতো না, তাই দিনকাল খুব কষ্টে কাটছে।”
চাঁন গাজীর কবিতা লেখা ও জীবনের সুখ-দুঃখ নিয়ে আরও জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন সময় সংকটের কারণে জানা যায়নি। আশা আছে পরবর্তীতে বিস্তারিত জেনে পাঠকদের জানানোর।
পাঠকদেন জন্য চাঁন গাজীর একটি কবিতা নিম্নে তুলে ধরছি:
প্রতিকার
প্রতিরোদ নয় প্রতিকার;
মিথ্যা মোচন অনুরাগে,
সুখে সত্যের সুপ্রচার।
রাখি; প্রতিকারের তালিকাতে-
অন্যায়- জুলুম- অবিচার;
হিন্দু-মসলিম ইচ্ছে যত-
বঞ্চিত সার্বিক অধিকার।
দোষের চাকায় ভাগ্য-গাড়ী,
করে যে জন আবিস্কার:
দূর্ভাগ্যকে ভাগ্য জেনে-
ভাবছে মনে পুরষ্কার।
মাঠের মতো লোভী ইদুর,
গরীব-দুখীর সুখের আহার;
দেয়াল কেটে ছিদ্র-পথে-
আপন গর্তে করছে পাচার।
অসৎ হস্তের উপার্জনে,
কাছে টানে অহংকার;
সত্য কথার ভাত নেই কোথা,
যে মুখ হয় সেই ভাষ্যকার।।
অনুরোধে হয়তোবা প্রতিবাদে-
রেখে নয়তো ধিক্কার;
সাম্য বলে সমাজ ব্যাধির
খুজে পাবে প্রতিকার।
বন্ধ করে জন কক্ষের
আছে যত ভ্রান্তি-দ্বার:
দেখি সবে শান্ত চোখে-
সহা কল্যাণ জনতার।।
এই একটি কবিতা নয়, এরকম অনেক কবিতা লেখেছেন চাঁন গাজী। তার প্রতিটি লেখা যেন জীবনের কথা বলে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে, সাম্য ও শান্তির কথা বলে। সাম্প্রদায়িক দেয়াল ভাঙে অসাম্প্রাদায়িক চেতনার কথা বলে এবং পরিবেশ ও প্রকৃতিকে ভালোবেসে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের কথা বলে।
চাঁন গাজী শুধু প্রান্তিক কৃষক নয়, তিনি হবেন সমাজ সংস্কারের অন্যতম মুখপত্র যদি চাঁন গাজীকে আমরা আবিস্কার করতে পারি, যদি তার আত্মপ্রকাশে আমরা ভূমিকা রাখি!