পূঁথিপাঠে মুগ্ধ হলেন শতাধিক দর্শক-শ্রোতা
মানিকগঞ্জ থেকে এম.আর.লিটন
পুঁথিপাঠের কথা মনে হলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে গ্রামীণ পরিবারে সন্ধ্যার পর উঠানে কূপিবাতি বা হারিকেন জ্বালিয়ে করুণ সুরের মাধ্যমে কোন বেদনাত্মক ঘটনার বিবরণ উপস্থাপন করার প্রতিচ্ছবি। যেখানে পরিবারের ছোট বড় সবাই গোল হয়ে বসে ঘটনার বিবরণ করুণ সুরের মাধ্যমে শুনতেন।
এই পুঁথিপাঠ একদিকে যেমন ছিল গ্রাম বাংলার বিনোদনের বড় একটি মাধ্যম তেমনি একসময় অনেকে পুঁথিপাঠের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহ করতেন। অন্যদিকে এর মাধ্যমে পরিবারের ও প্রতিবেশির ছোট বড় কোন ঘটনার বিবরণ জানতে পারতেন সবাই এক সাথে বসে। এই পুঁথি পাঠের আসরের মাধ্যমে কয়েকটি পরিবারের ছোট বড় সকল সদস্য এক সাথে বসে আলোচনা করতেন- কিভাবে এই সব অনুষ্ঠান শুনতে হয় এবং কিভাবে বড়দের সম্মান করতে হয়। এটা ছিল পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষার পাঠশালার আসর। এ সব আসরে সাধারণত গ্রামের প্রবীণ মানুষেরা এই পূুঁথিপাঠ করতেন এবং যে বাড়িতে পুঁথি পাঠ হতো সেই বাড়ির লোক তাদের রাত্রের খাবারের ব্যবস্থা করতেন।
বেদনাত্মক বা আনন্দময ঘটনার বিবরণ সুরের মাধ্যমে গাওয়া, গ্রাম বাংলার অতীতের জনপ্রিয় লোকসংগীত পুঁথিপাঠ এখন যেন চর্চাহীন এবং বিলুপ্ত হওয়ার পথে। কারণ আধুনিক যুগের চলমান সাংস্কৃতি বা টেলিভিশন, মোবাইল, ফেসবুক ও ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন মাধ্যমগুলোর দখলে ফলে।
কিন্তু দেখা যায় এখনো পুঁথিপাঠ শুনার জন্য মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। তার উদাহরণ গত ২ অক্টোবর (রবিবার) মানিকগঞ্জ জেলার বিজয় মেলার মাঠে, বিকাল ৫ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হয় পুঁথিপাঠ। গ্রাম বাংলার প্রাচীন এই বিনোদন মাধ্যম পুঁথিপাঠ শোনে মুগ্ধ হলেন মানিকগঞ্জের প্রায় পাঁচ শতাধিক দর্শক-শ্রোতা। বারসিক আয়োজনে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষে ও প্রবীণ অধিকার সুরক্ষায় সাংস্কৃতিক প্রচারাভিযান এর আয়োজনে ৩ দিন ব্যাপী ‘সাংষ্কৃতিক উৎসব’ ২য় দিনে নিজের রচিত পুঁথিপাঠ করেন, ফকির আশ্রম শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য মো. নুরুল ইসলাম। পুঁথিপাঠের বিষয়বস্তুর মধ্যে ছিল প্রবীণদের বাস্তব জীবনের ঘটনা ও জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ এবং পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩।
এই পুঁথিপাঠের মাধমে যেমন প্রবীণদের বাস্তব জীবন ও অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন তেমনিভাবে পুঁথিপাঠের মাধ্যমে গ্রাম-বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও শিল্প-সাহিত্যসহ লোকায়ত জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তাই আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে যে, আমরা যেমন প্রবীণদের সেবা, যত্নে রাখবো তেমনিভাবে প্রাচীন ঐতিহ্য পুঁথিপাঠকে সংরক্ষণ বা বাঁচিয়ে রাখবো ।