রোজার আগেই মানিকগঞ্জের বাজারে নিত্যপণ্যের দামের উত্তাপ: দিশেহারা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষজন
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক
চলতি মাসের শেষের দিকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। আর রমজানকে সামনে রেখে ঘিওর উপজেলাসহ মানিকগঞ্জে দিন দিন বেড়েই চলেছে নিত্য পণ্যের দাম। ইতোমধ্যে ছোলা, চিনি, জিরা, এলাচ, তেল, ডাল ও চাল এর দাম বেড়েছে। দর দাম নিয়ে বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রায়ই বাকবিতন্ডায় জড়াচ্ছেন। ঘিওরের বানিয়াজুরী এলাকার নুরুল করিম বাবু জানান, হঠাৎ করে পণ্যের দাম বাড়লেও বেতন বাড়েনি। রোজার মাস এবার যে কীভাবে চলবো সে ভাবনায় দিশেহারা হতে হচ্ছে।
গত দুইদিনে জেলার বিভিন্ন বাজারে ছোলা ৮৩/৮৫ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, এলাচ এক হাজার ৭০০ টাকা, সয়াবিন ৮৫ টাকা, পামওয়েল ৭৫ টাকা, সরিষার তেল ১৩০ টাকা, মোটা মুগ ডাল একশ বিশ টাকা, মাঝারি মুগ ডাল ১০০ টাকা, সোনা মুগ ডাল ১০৮/১১০ টাকা, পরশ মিনিকেট চিকন ও মজুমদার বালাম চাল ৫৫ টাকা, আতপ চিকন চাল ৫০ টাকা, মোটা আতপ চাল ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির মধ্যে শাক প্রতি আঁটি ১০/১৫ টাকা, লাল শাক ১০/১৫ টাকা, পুঁই শাক ২০/২৫ টাকা, কলমি ও পুঁদিনা পাতা ১০ টাকা, পিঁয়াজ প্রতি কেজি ৩৫ টাকা, রসুন ১০০/১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
রোজা শুরু হওয়ার আগেই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে মানিকগঞ্জের সবজির বাজারেও। রাতারাতি বেড়ে গেছে বেশ কিছু সবজির দাম। এতে করে বেকায়দায় পড়েছে নিম্ন আয়ের লোকজন। বরংগাইল হাট, বানিয়াজুরী বাসষ্ট্যান্ড, বাঠইমুরি আড়ৎ, তরা আড়ৎ, মানিকগঞ্জ কাঁচা বাজার ও সজবির আড়ত ঘুরে দেখা গেছে, দাম বেড়েছে আলু ও কাঁচামরিচ। আলুর দাম কেজি প্রতি ৪ টাকা, কাঁচামরিচ ২০ টাকা বেড়েছে। রমজানে সবজির বাজারে প্রায় প্রতিটি সবজির দামই বেড়েছে অস্বাভাবিক। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে বেড়েছে পটল ৫ টাকা, টমেটো ৩০ টাকা, বরবটি ১০ টাকা, বেগুন ১০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫ টাকা, পেপে ১০ টাকা, কাকরল ১০ টাকা, চাল কুমড়া ৫ টাকা, ঝিঙ্গা ৫ টাকা, কাঁচা কলা ৫ টাকা, করলা ১০ টাকা, শষা ২০ টাকা। সবজির মধ্যে পটল ৪০ টাকা, ভেন্ডি ৩০, পেঁপে ৪০ টাকা, কুমড়া ২০/৩০ টাকা, ঝিঙ্গে ৪০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, উস্তে ৪০ টাকা, বেগুন ৪০/৫০ টাকা, আলু ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ বাসষ্ট্যান্ড এলাকার কাঁচা বাজারের সবজি বিক্রেতা মোঃ তৈয়ব বলেন, রমজানের আগে হঠাৎ করে জিনিস পত্রের দাম বাড়তে শুরু করেছে। কাঁচা বাজারের মো. আলী হোসেন জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে বেশি দরে মোকাম থেকে আমাদের পণ্য কিনতে হয় তাই দাম একটু বেশি। আমদানি বাড়লে ও পণ্যের ভ্যাট কমানো হলে জিনিসপত্রের দাম কমতে পারে।
অন্যদিকে, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৪৮০ টাকা, খাসির মাংস ৬৭০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ২২০ টাকা, দেশি হাঁস ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা কেজি, বড় রুই ৪শ’ থেকে ৭শ’ টাকা, ছোট ও মাঝারি রুই ১৩০ থেকে ৩শ’ টাকা, কাতলা মাছ (বড়) ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা, বড় পাতাড়ী (ভেটকী) ৬শ’ থেকে ৭শ’ টাকা, ছোট পাতাড়ী ২৫০ থেকে ৩শ’ টাকা, চিংড়ী প্রকারভেদে ২৭০ থেকে ৪৫০ টাকা, বাগদা ৬০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা, বেলে মাছ ৪শ’ থেকে ৬শ’, চাষের কই ৪শ’, দেশি কই (মাঝারী) ৫৫০ টাকা, টেংরা ছোট ৪শ’, বড় টেংরা ৭শ’ টাকা, শিং ৬শ’ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ দুধবাজারে বাজার করতে আসা শহরের কম্পিউটার ব্যাবসায়ী রানা হামিদ জানান, হঠাৎ পণ্যের দাম বাড়ার কারণে হতাশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। রোজার সপ্তাহখানেক আগ থেকেই বাজার গরম হয়ে উঠেছে। পণ্য মূল্য ক্রমেই ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবার বেশিরভাগ সবজির দাম স্থিতিশীল ছিল। তবে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। রমজানে সবজির কমতি না থাকলেও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এছাড়া বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাও কার্যকর নেই বলে ক্রেতারা জানান। এসবের ফলে সবজি ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে বলে জানান তারা। ক্রেতারা মনে করেন, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকায় বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম হাঁকিয়ে নিচ্ছেন।