পরজীবী উদ্ভিদ আলোক লতা
রাজশাহী থেকে অনিতা বর্মণ
রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি উপজেলায় অবস্থিত খরিয়াকান্দি গ্রাম। এই গ্রামে পথেই দেখা মিললো আলোক লতার। খরিয়াকান্দি গ্রামের মোসা: মাজেদা বেগম এর সাথে কথার বলার এক পর্যায়ে আলোক লতার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রকৃতিতে সৌর্ন্দয্য বাড়িয়ে তোলে যে কয়েকটি লতা, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আলোক লতা। এই লতা নিজের মত করে সবুজ শ্যামল পথে প্রান্তরে আপন রূপের মহিমা ছড়ায়। দেশের সব জায়গায় দেখা যায় আলোক লতা। গ্রামে বসবাসকারী সব মানুষ এই লতাকে চেনেন।”
তিনি আরো বলেন, “আলোক লতা একটি পরজীবী উদ্ভিদ। জীবন্ত গাছে জন্ম নিয়ে গাছকে অবলম্বন করেই টিকে থাকে। যে গাছে জন্মায় সেই গাছের ডাল ও কান্ড থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে এই উদ্ভিদ। বেশির ভাগ বড়ই, বাবলা ইত্যাদি কাটাবহুল গাছে জন্মাতে দেখা যায়।” এই উদ্ভিদটির পাতাবিহীন রসালো কান্ড, সোনার মত রঙ, আর্কষণীয় চেহারা। এই উদ্ভিদের কোন পাতা নেই, লতাই এর দেহ, লতাই এর কান্ড, শাখা-প্রশাখা। এই উদ্ভিদ প্রাকৃতিকভাবে বংশ বিস্তার করে থাকে। এই উদ্ভিদের সোনালি রঙ বহুদুর থেকে মানুষের নজর কেড়ে নেয় । পৌষ ও চৈত্র মাসে এই লতার বেড়ে উঠা ও ফুল ফোটার সময় ।
বাংলাদেশের আবহাওয়া স্বর্ণলতার জন্য অত্যন্ত উপযোগি । ফলে গ্রাম এলাকায় উপযুক্ত নির্ভরশীল গাছে আপন মনে জন্ম নেয় আলোকলতা। এখন আলোক লতার ভরা মৌসুম। অনেক গ্রামে এই লতার পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে, আবার কোন কোন গ্রামে কেবল জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠার জন্য এর ডগা উকি ঝুকি দিচ্ছে।
আলোক লতার অনেক গুণ। এই উদ্ভিদের রস ক্ষত স্থান, ঘুম, বাতব্যথা উপশমে কার্যকরী। আমাদের দেশে একে ওষুধি লতা হিসেবেও গণ্য করা হয় ।
আলোক লতার বর্তমান অবস্থা খুব ভালো না । দুই তিন যুগ আগেও দেশের যে কোন স্থানে পথে প্রান্তরে ব্যাপকভাবে চোখে পড়তো আলোক লতা। বড়ই গাছই মুলত এর প্রধান আশ্রয় কেন্দ্র। কিন্তু বর্তমানে পাড়া গাঁয়ে, পথের ধারে বড়ই গাছ আর চোখে পড়েনা। ফলে আশ্রয় হারিয়ে ফেলে আলোক লতা।