ঔষধিগুণে ভরপুর তিত বেগুন
সাতক্ষীরা থেকে বাহলুল করিম
ছোট বেলার খেলার কথা হঠাৎ মনে পড়ে গেল। তখন বাগানে বেগুনের মতো দেখতে ছোট এক ধরণের কী একটা পাওয়া যেত। এগুলো দিয়ে আমারা তখন খেলা করতাম। বড় হয়ে জানতে পারি এগুলোকে তিত বেগুন বলে। এটি খেতে তিতো স্বাদের ও হুবুহু বেগুনের মতো দেখতে কিন্তু আকারে অনেক ছোট তাই নাকি এর নাম হয়েছে তিত বেগুন। শিশুদের খেলার সামগ্রী হিসেবেও ব্যবহৃত হয় তিত বেগুন।
এছাড়া তিত বেগুনকে অ্যালার্জি সমস্যার মহাঔষধ বলা হয়। এছাড়া কাঁশি ও হাপানি সমস্যায়, রক্ত পরিষ্কার করতে, পিত্ত ঠাণ্ডা রাখতে, হজম শক্তি বৃদ্ধিতে, গ্যাসট্রিক সমস্যায়, গুড়ো ক্রিমি দুুুুর করতে তিত বেগুন ওষুধের মতো কাজ করে। সবজি হিসেবে তিত বেগুন রান্না করেও খাওয়া যায়।
রাস্তার আশেপাশে, বাড়ির আনাচে-কানাচে, আগান-বাগানে তিত বেগুন দেখা যায়। এটি চাষ করা হয় না বরং অবহেলায় ও অযত্নে এমনিতেই হয়। তিত বেগুন দেখতে বেগুনের মতো কিন্তু আকারে অনেক ছোট। এটি থোকা থোকা হয়ে গাছে ঝুলে থাকে। এক থোকায় ১০-১৫টির মতো তিত বেগুন দেখা যায়। তিত বেগুন অপরিণত অবস্থায় হালকা সবুজ থাকে। কিন্তু পরিণত অবস্থায় রঙটা একটু গাঢ় হয়।
তিত বেগুন গুল্ম জাতীয় হালকা কাষ্ঠল প্রকৃতির এক ধরণের উদ্ভিদ। এর পাতা হালকা সবুজ ও গাড় সবুজ ধরণের হয়। মাটি থেকে বেশ কিছুটা উপরে ফুল ও ফল হয়। এর ফুল সাদা রঙের হয়। ফুল দেখতে অনেকটা আকাশের তাঁরার মতো। একটি ফুলে পাঁচটি পাঁপড়ি থাকে। ফুলের গর্ভাশয় হলুদ রঙের হয়। ফুলের সাহায্যে পরাগায়ণ হয়ে ফলে পরিণত হয়। তবে এর পাতায় এবং ফুল ও ফলের গোড়ায় ছোট ছোট নরম কাঁটা দেখা যায়।
তিত বেগুনের স্থানীয় নাম ছোট বেগুন। অনেক জায়গায় এটি কাকমাচি, তিত বেগুন ও আঙ্গুরে শেফা নামেও পরিচিত। তিত বেগুন রান্না করেও খাওয়া যায়।
সাতক্ষীরা জেলায় এটি তিত বেগুন নামে অধিক পরিচিত। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মৃগীডাঙ্গা গ্রামের রাস্তার দু’পাশে তিত বেগুন গাছ দেখা গেছে। অত্যন্ত অবহেলায় ও অযত্নে বেড়ে উঠেছে এই তিত বেগুন গাছ। রাস্তায় যাওয়ার পথে অনেকে জিজ্ঞাসা করে আসলে এটি কী জিনিস? আবার অনেকে বলে এটি ছোট বেগুন।
এছাড়া তিত বেগুন শিশুরা খেলার সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করে। শিশুরা খোলার সময় এগুলো দিয়ে রান্না করে। তারা আবার মিছেমিছি খেলাচ্ছলে এগুলো খায়। এতে খুবই আনন্দ পায় তারা।
এ ব্যাপারে মৃগীডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা ছোটবেলায় ছোট বেগুন দিয়ে কত খেলা করেছি। আমরা তখন খেলাচ্ছলে এগুলো রান্না করে খেতাম। রান্না করে পাড়ার মুরব্বিদেরও দাওয়াত দিতাম। তারা এসে আমাদের সাথে খেলাচ্ছলে খেতো। এতে আমরা খুব মজা পেতাম।”
একই গ্রামের বাসিন্দা সোনালী খাতুন বলেন, “তিত বেগুনে অনেক ঔষধি গুণাগুণ আছে। এটি কাঁচা লবণ দিয়ে চিবিয়ে খেলে সর্দি-কাশি সমস্যায় ভালো উপকার পাওয়া যায়। বুকে কফ জমলে তিত বেগুন রান্না করে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।”
সাতক্ষীরা শহরের পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস বলেন, “তিত বেগুন একটি সবজি। এটি গ্রামে-গঞ্জে ও রাস্তার আশপাশে দেখা যায়। তবে অন্য কোন সবজির মতো এটি এতোটা দেখা যায় না। খুব কমই দেখা যায়। একে আমরা ছোট বেগুন বা তিত বেগুন বলি। অনেক জায়গায় আবার এটি কাকমাচি হিসেবেও পরিচিত। তবে তিত বেগুনে নানা ধরণের ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটিকে মেডিসিনও বলা যায়। তিত বেগুনকে অ্যালার্জির মহাঔষধ বলা হয়। তিত বেগুন রান্না করে খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়। তিত বেগুন কাঁচা চিবিয়ে এক গ্লাস পানি খেলে পিত্ত ঠাণ্ডা হয়, হজমের গণ্ডগোল দুর হয় ও গ্যাসের সমস্যায় ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া তিত বেগুন সবজি হিসেবে রান্না করে খেলে গুড়ো কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।”
সব মিলিয়ে তিত বেগুন ঔষধি গুণাগুণে ভরপুর একটি সবজি। এছাড়াও এতে রয়েছে নানাবিধ পুষ্টিগুণ। তিত বেগুন যেমন রান্না করে খেলে ওষুধের চাহিদা মেটে অপরদিকে বাচ্চারা খেলার সামগ্রী হিসেবেও ব্যবহার করে।