গাছে লম্বা পাতা হলেও নাম গোলপাতা
সাতক্ষীরা থেকে মীর খায়রুল আলম
গাছ ও পাতার আকার লম্বা হলেও নাম গোলপাতা গাছ। তবে গোলপাতা নাম অনেকের কাছে অতি পরিচিত। আবার অনেকে কাছে নাম জানা থাকলেও গাছ সম্পর্কে ধারণা নেই।
সাধারণত লোনা পানিতে জন্ম নেয় গোলপাতা গাছ। তাল বা খেজুর গাছের মত গোলপাতা গাছ দেখতে হলেও কোন কাটা থাকে না। গাছের গোড়া অসংখ্য ডাটা একটির সাথে আরেকটি লেগে থাকে। গোলপাতা গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে পাতাগুলো পরিপক্কতা লাভ করে। এক সময় পরিপক্ক পাতাগুলো কেটে নেওয়া হয়। কাটা পাতার মাঝখান থেকে চিরে ২ খন্ডে বিভিক্ত করা হয়। এরপর সেটি রৌদ্র শুকিয়ে নেওয়া হয়।
শুকানো গোলপাতা সাইজ অনুযায়ী সাজিয়ে বড় বড় বোঝা তৈরি করে বাজারজাত করা হয়। বাজারে নেওয়ার পর সেগুলো সাইজ অনুযায়ী কুড়িতে বা পোন আকারে বিক্রয় হয়। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে চাষ ছাড়াও অনেকে ব্যক্তিগতভাবে চাষ করে নিজেদের কাজে ব্যবহার করেন। সাধারণত আগের দিনের বসতবাড়ি, রান্নাঘর, গোয়ালঘর, মৎস্য ঘেরের বাসা, বৈঠকখানাসহ বিভিন্ন ঘরের ছাউনিতে ব্যবহার করা হত। কিন্তু আজকের দিনে আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে গোলপাতার চাহিদা কমে গেছে।
গোলপাতা শুধু ঘরের ছাউনি ছাড়া রান্নার কাঠ হিসাবে ব্যবহার করা হয় গোলপাতা। তাছাড়া গোলপাতা গাছের পাতার ভিতর থেকে মোচা আকারে বের হয়। ফুল থেকে দৃষ্টিনন্দন ফল বের হয়। ধীরে ধীরে তালের কাধির মত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলটি পরিপক্ক হলে ফলের ভিতরের অংশের স্বাদ অনেকটাই কাঠবাদামের মত। এটি শিশুদের কাছে অনেক প্রিয় খাবার।
তবে, বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, গোলপাতা (Nipa palm) Arecaceae গোত্রের (Palmae) পাম জাতীয় এক উদ্ভিদ প্রজাতি, Nypa fruticans। এটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ, ছড়িয়ে আছে এশিয়া, ওসেনিয়া ও আফ্রিকার পূর্ব-উপকূলের ম্যানগ্রোভ বনে। কান্ড খাটো, অনুভূমিক ও তাতে অৎস্র শিকড়। পাতা লম্বা ও খাড়া, ৩-৯ মি লম্বা। গোলপাতা সুন্দরবনে স্বল্প ও মধ্যম লবণাক্ত অঞ্চলে জন্মে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে লোকেরা গৃহস্থালির কাজের জন্য ক্ষেত জমিতেও কিছুটা গোলপাতা চাষ করেন। ঘরের চাল ছাওয়ার জন্য গোলপাতা পটুয়াখালী, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরায় ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবন থেকে বছরে প্রায় ২,১০০ মে টন গোলপাতা সংগৃহীত হয় এবং এ কাজে যুক্ত আছে প্রায় ২০,০০০ লোক। ম্যানগ্রোভ বনের কাদাভরা নদীতীর ও উন্মুক্ত উপকূলে বীজ লাগিয়েও চাষ করা যায়। জোয়ারধৌত জমির বীজতলায় সাধারণত গোলপাতার চারা তৈরি হয়। দু’মাস বয়সী ২৫ সেমি উঁচু চারা স্থানান্তর করা যায়। লোকে ৫-বছর বয়সী গাছের পাতা বছরে একবার কেটে থাকে। শুকনো মওসুম (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি) পাতা কাটার সময়। মাঝের ও সংলগ্ন কিছু কচি পাতা রেখে অন্য সবগুলো পাতাই কাটা যায়।
ভ্রমণ পিয়াসীরা ঘুরতে এসে ভিন্ন স্টাইলে মুঠোফোনে, ক্যামেরায় ছবি তুলতে দেখা যায় গোলপাতা বনে। গোলপাতা গাছের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ করে তাদেরকে। তাই তো ছুটির দিন কিংবা বিশেষ দিনে আপনজনদের নিয়ে বেড়াতে আসেন সুন্দরবনে, দেবহাটা ম্যানগ্রোভ বনে, ইছামতি নদীর নাংলা সীমান্তে গোলপাতা বনে। চাইলে আপনিও আসতে পারেন প্রকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে।