১৩০ জাতের বিরল বুনো গাছ দেখে অভিভূত সবাই

সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে বাবলু জোয়ারদার, রামকৃষ্ণ জোয়ারদার ও মফিজুর রহমান

কাচরাহাটি গ্রামের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে বারসিক’র সহযোগিতায় কাচরাহাটি মন্দিরের মাঠে স্থানীয় কৃষক-কৃষাণী-শিক্ষার্থী ও বারসিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে ২৮ এপ্রিল ২০১৯ রবিবার এক পাড়া মেলার আয়োজন করা হয়।

1

মেলায় অংশগ্রহণকারী নারীদের সংগৃহীত ও প্রদর্শিত গাছের নাম, প্রাপ্তিস্থান, ব্যবহার, গুনাগুণ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি মেলার বিষয়বস্তু হিসেবে আলোচিত হয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে পতিত জায়গা কমে যাওয়া ও লবণাক্ততার প্রভাবে অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাজার নির্ভরশীলতায় এ উদ্ভিদ বৈচিত্র্যে ব্যবহার কমে যাচ্ছে ফলে নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের মধ্যে এ উদ্ভিদ সম্পর্কে ধারণা কমে যাচ্ছে। তাই স্থানীয়দের মধ্যে বৈচিত্র্যময় এ উদ্ভিদের ব্যবহার বাড়িয়ে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে অচাষকৃত উদ্ভিদের ব্যবহার, প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে ধারণা ও সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতন করতে মেলাটি আয়োজন করা হয়।

মেলায় অংশগ্রহণকারী নারীরা তাদের সংগৃহীত অচাষকৃত উদ্ভিদের একটি করে আলাদা স্টল দেন। তারপর তারা এক এক জন করে তাদের সংগ্রহ করা উদ্ভিদগুলো দেখিয়ে তার নাম, প্রাপ্তি স্থান ও ব্যবহার সম্পর্কে বিচারকসহ উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন। মেলায় ১৮ জন নারী বিভিন্ন ধরনের অচাষকৃত উদ্ভিদের সমন্বয়ে ১৮টি স্টল দেন।
মেলা সম্পর্কে অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে থেকে কৃষাণী রেনুকা রানী মন্ডল বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের মেলা দেখেছি। কিন্তু এর আগে আমি এ ধরনের অচাষকৃত উদ্ভিদের ও ঔষধি গাছের মেলা করতে দেখিনি। প্রকৃতির প্রয়োজনীয় গাছপালা সম্পর্কে জানার জন্য এই ধরনের মেলা আমাদের দরকার। এই মেলা থেকে আমারা নতুন নতুন অনেক কিছু জানতে পেরেছি। আমরা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করবো, অন্যদেরকে বলবো ও সংরক্ষণ করবো এবং পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকেও উদ্বুদ্ধ করবো, জানাবো।

2
বিচারক শিক্ষক ও সাংবাদিক রনজিত কুমার মন্ডল বলেন, ‘প্রথমে বারসিককে ধন্যবাদ জানাই। এই রকম অনুষ্ঠানে বিচারক হওয়ার জন্য আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। এখান থেকে কিছুটা হলেও শিখতে পেরেছি। যা আমি আমার পরিবারে যেয়ে ব্যবহার করবো। আপনারা যারা উপস্থিত আছেন তারা নিজেরা ব্যবহার করবেন এবং অন্যকে উৎসাহিত করবেন এবং সেই সাথে সংরক্ষণ করবেন।’

3
সবশেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সর্বোচ্চ বিরল বুনো উদ্ভিদ নাম ও ব্যবহার প্রদর্শন করে অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে প্রথম স্থান অর্জন করেন রেনুকা রানী মন্ডল, দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন স্বপন মন্ডল এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেন সুমিত্রা মন্ডল ।

4
এসব উদ্ভিদ সংরক্ষণ উদ্যোগই নিশ্চিত করবে গ্রামীণ জনপদের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা। অচাষকৃত উদ্ভিদের পাড়া মেলার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ও রক্ষা এবং নতুন প্রজন্ম তথা সকলের উদ্যোগ গ্রহণে এ ধরনের কর্মসূচি জরুরি যা উপকূলীয় এলাকায় খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে। মেলায় আগত শিশু ও তরুণেরা নিজেদের আপনজনের কাছ থেকেই অনেক অজানা বিষয় জানতে পেরে এ ধরণের কাজ নিজেরা ভবিষ্যতে করার আগ্রহ দেখায়।

happy wheels 2

Comments