দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারীদের পৃথক টয়লেট ব্যবস্থা করতে হবে

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে মফিজুর রহমান
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্রে নারীদের জন্য পৃথক টয়লেটের দাবিতে সম্প্রতি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শ্যামনগর উপজেলা চত্তরে উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির আয়োজনে এবং সিডিও ইয়ুথ টিম,সুন্দরবন স্টুডেন্ট সলিডারিটি টিম ও বারসিক’র সহযোগিতায় এই মানববন্ধন কর্মসূচী আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের জরিপে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের সর্বাধিক দুর্যোগ ঝূঁকিপূর্ণ জনপদ শ্যামনগর উপজেলা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী এবং যেকোন দুর্যোগে তারা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন।

বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার মধ্যে সর্বাধিক প্রাকৃতিক ঝূঁকিপূর্ণ জনপদ উপকূলীয় সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর। সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা, অপরিকল্পিত চিংড়িচাষ, কৃষি জমির অপরিকল্পিত ব্যবহার, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, মিষ্টি ও সূপেয় পানির অভাব এই এলাকার প্রতিদিনের সমস্যা।’ তারা আরও বলেন, ‘উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মোট জনসংখ্যার তুলনায় এই উপজেলায় দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা খুবই নগন্য। সরকারি হিসাব মতে, দুর্যোগকালীন সময়ে এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ধারণ ক্ষমতা কম যা এলাকার জনসংখ্যার তুলনায় অপ্রতুল। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে দুর্যোগকালীন সময়ে আশ্রয় নেওয়া নারী, শিশু ও প্রবীণদের জীবনে শুরু হয় মানবতা বিবর্জিত অন্য এক দুর্যোগ ও অব্যবস্থাপনা।’

অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতিনীতিকে বিবেচনা না করে তৈরি করার কারণে নারী-পুরুষ সবাই এক ঘরের ভিতর থাকতে হয়। একই টয়লেট ব্যবহার করতে হয় সবাইকে যা আমাদের নারীদের জন্য সত্যিই বিব্রতকর। আশ্রয়কেন্দ্রে নারীদের জন্য কোন আলাদা থাকার ব্যবস্থা না করার কারণে নারীদের প্রাকৃতিক কারণে শরীর খারাপ (পিরিয়ড) হলে কাপড় পরিষ্কার করতে হয় লবণ পানিতে। কিন্তু যথাযথ জায়গা এবং পরিবেশ না থাকার কারণে সেগুলো শুকানোর কোন উপায় থাকে না। ফলে বাধ্য হয়ে নারীরা ঘরের কোনায় লুকিয়ে রেখে শুকানোর চেষ্টা করেন। অনেক সময় তারা আধা শুকনা কাপড় ব্যবহার করেন। ফলে নারীদের পরবর্তীতে অনেক ধরনের সমস্যা ভোগ করতে হয়।

তারা আরও জানান, নারীরা পুরুষদের সামনে দিয়ে বাথরুমে যেতে লজ্জা পান। লজ্জার কারণে অনেক নারী বাথরুম চেপে রাখে। যার ফলে পরবর্তীতে নারীদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। দুর্যোগের সময় নারীরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। দুর্যোগের পূর্বাভাস হলে সবার শেষে নারীরা আশ্রয় কেন্দ্রে যান। ফলে ভালো জায়গাও তারা পান না। গাদাগাদি করে থাকতে হয় আশ্রয়কেন্দ্রে। রাতের বেলায় দুর্যোগ হলে আশ্রয়কেন্দ্রে নারী ও শিশুদের সমস্যার শেষ নেই। খাবার, সুপেয় পানি, পারিবারিক ব্যবহার্য পণ্য ও গৃহপালিত পশুপাখি সংরক্ষণের অধিকাংশ দায়িত্ব পালন করতে হয় নারীদের। এছাড়া ছোট শিশুদের খাওয়া, কাপড় সংরক্ষণ এবং তাদের চোখে চোখে রাখার বিষয় নিয়ে বিপদে পড়েন মায়েরা। বেশির ভাগ আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মানুষের তুলনায় ছোট ও কম জায়গা। যে কারণে সারাক্ষণ শিশুদের উপর নজরদারি করা সম্ভব হয় না। ফলে অনেক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। রাতে নারীদের বেশি ভয়ে থাকতে হয় সম্ভ্রম হারানোর।


বক্তরা আরো বলেন, ‘প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আশ্রয় কেন্দ্রে চুলার সংকটের কারণে নারীদেরকে একজন করে রান্না করতে হয়। এখানে জ্বালানি সংকট রয়েছে যেটার ব্যবস্থা করতে হয় পরিবারের নারীদেরকে। অনেকসময় নদী থেকে ভেসে আসা কাঠ ধরে রান্না করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সতর্ক সংকেত দিলে আতঙ্ক কাজ করে। শুধু মনে হয় আবারও কি ওই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারী-পুরুষের আলাদা থাকার ব্যবস্থা, খাবারের ব্যবস্থা, টয়লেটের ব্যবস্থা, গোসলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। একই সাথে গর্ভবতী নারী, নবজাতক শিশু এবং প্রবীণদের জন্যও আলাদা থাকার ব্যবস্থা করার দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।’
উপকূলের জলবায়ু ঝূঁকির মধ্যে বসবাসকারী নারী ও শিশুদের জীবনের সার্বিক নিরাপত্তায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নারী-শিশু ও প্রবীণবান্ধব করার জন্য সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করেন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা।

happy wheels 2

Comments