আমরা নারী, আমরাই পারি
মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার
‘নারীর ক্ষমতায়নে ঐক্যবদ্ধ হউন’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বারসিক মানিকগঞ্জ রিসোর্স সেন্টারের আওতাধীন সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের (মানিকগঞ্জ পৌরসভা, জাগীর, কৃষ্ণপুর, বেতিলা-মিতরা, পুটাইল) নারী সংগঠনের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে গতকাল উপজেলা পর্যায়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানিকগঞ্জ পৌরসভা, জাগীর, কৃষ্ণপুর, বেতিলা-মিতরা, পুটাইলসহ মোট ৫টি ইউনিয়নের ১০টি সংগঠনের ২০ জন প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে বারসিক কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার শুরতেই বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল চন্দ্র রায় সভার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “নারী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক ধরণের কাজ করে থাকে। কিন্তু নারীর এই কাজের কোন স্বীকৃতি নাই। পরিবার স্বীকৃতি দেয় না। নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাজে সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। নারী-পুরুষ উভয়কেই সহনশীল হতে হবে। তবেই পরিবার, সমাজ-সংসারে সুখ-শান্তি বিরাজ করবে। তা নাহলে সংসারে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকবে।’
সভায় উপস্থিত নারী প্রতিনিধিদের আলোচনায় বেশ কিছু সমস্যা ও বৈষম্য উঠে আসে। সেগুলো হলো- নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর অবস্থা ও অবস্থান, নিরাপদ স্বাস্থ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকা, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্য বিবাহ, নারীর কর্মসংস্থান, নারীর নিরাপত্তা, নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা, তথ্য জানার ক্ষেত্রে ঘাটতি, সম্পত্তিতে নারীর অধিকার, নারীর কৃষি কার্ড নাই, ব্যাংক একাউন্ট নাই ইত্যাদি। এসব সমস্যার সমাধানে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসাথে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সভায় উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে জরিনা বেগমকে আহবায়ক ও ইয়াসমিন আক্তারকে সদস্য সচিব করে উপজেলা নারীর প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধ কমিটি নামে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে প্রত্যেক সংগঠনের প্রতিনিধিদের যুক্ত করা হয়।
মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী নারী প্রতিনিধিরা নারীর প্রতি সব ধরণের বৈষম্য থেকে উত্তোরণ ঘটানো দরকার বলে মনে করছেন। আর এসব সমস্যা সমাধান ও বৈষম্য দূরীকরণে তারা একসাথে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আর এই একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য সংগঠিত হওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে তারা মনে করেন।
উল্লেখ্য যে, বারসিক ২০০৭ সাল থেকে মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় কার্যক্রম শুরু করে। নারী নেতৃত্ব তৈরি, নারী নেতৃত্বের বিকাশ, নারীর ক্ষমতায়তন, নারীর কাজের স্বীকৃতিসহ নারী-পুরুষের সমতা আনয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। কাজের ধারাবাহিকতায় সদর, সিংগাইর, ঘিওর ও হরিরামপুর উপজেলায়ও কার্যক্রম শুরু করা হয়। আগ্রহী ও উদ্যোগী নারীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগঠন তৈরির মাধ্যমে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পাশে থেকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। নারীরা তাদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের লক্ষ্যে গড়ে তুলেছে নারী সংগঠন। গ্রামীণ নারীদের চাহিদার ভিত্তিতে এই সংগঠনগুলো গ্রাম ভিত্তিক গড়ে উঠে। প্রতি মাসে সংগঠনের মাসিক সভার মাধ্যমে নারীরা তাদের নিজেদের, সংগঠনের এমনকি পাড়ার সমসাময়িক সমস্যা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সকলের মতামতের ভিত্তিতে সেসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে থাকে। পাড়া, পাড়া থেকে গ্রাম, গ্রাম থেকে ইউনিয়ন ভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলার মাধ্যমে নারীরা তাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে। এখানেই তারা থেমে নেই। তারা মনে করেন, তাদের এই সমস্যা চিহ্নিতকরণ, সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র নিজ পাড়া বা নিজ গ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা ঠিক নয়। প্রতিটি সংগঠনের কাজ সম্পর্কে প্রতিটি সংগঠন জানতে পারলে সংগঠনই উপকৃত হবে। এর ফলে একটি সংগঠন অন্য সংগঠনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে। এই চিন্তা থেকেই নারীরা বিভিন্ন গ্রাম, ইউনিয়নের সংগঠন মিলে উপজেলা পর্যায় আহবায়ক কমিটি করার তাড়না অনুভব করে। বারসিক তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।