গ্রাম শহরের সমতা: তারুণ্যের একতা
রাজশাহী থেকে মো. শহিদুল ইসলাম
রাজশাহী জেলা শিশু একাডেমী মিলনায়তনে ‘গ্রাম শহরের সমতা: তারুণ্যের একতা’ শীর্ষক শ্লোগানে বরেন্দ্র যুব সম্মেলন ও সম্মাননা ২০১৯ সম্প্রতি (২৭ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র আয়োজনে বরেন্দ্র অঞ্চলের ২৪টি যুব সংগঠনের অংশগ্রহণে উক্ত সম্মেলনে সকালে শান্তির পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধন করেন ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডাঃ আব্দুল মান্নান।
এর আগে সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধো নিবেদন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বারসিক সমন্বয়কারী তৌহিদুল আলম, সেভ দি ন্যাচারের সভাপতি মিজানুর রহমান, রাজশাহী জেলার শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মনজুর কাদের, বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলামসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের তিন শতাধিক তরুণ। উদ্বোধন ও র্যালি শেষে বরেন্দ্র অঞ্চলের তরুণ সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি বর্তমান সরকারের ‘ আমার গ্রাম, আমার শহর’ শীর্ষক উন্নয়ন পরিকল্পনায় তরুণদের দৃষ্টিতে তাদের আঞ্চলিক ভিত্তিতে দাবিগুলোসহ তাদের কার্যক্রমগুলো উপস্থাপন করেন।
এ পর্যায়ে তরুণরা বলেন, ‘দেশের সার্বিক উন্নয়নের অগ্রগতি হলেও আঞ্চলিক ভিত্তিতে উন্নয়ন বৈষম্য দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। গ্রামে সরকারের সুযোগ সুবিধা, নাগরিক অধিকার যা পাবার কথাছিলো সেগুলো সঠিকভাবে পায়না গ্রামের মানুষ। শহরের প্রান্তিক মানুষগুলোও তাদের নাগরিক সুযোগ সুবিধাগুলো সঠিকভাবে পাচ্ছে না।’ তরুণরা দাবি করেন- গ্রামের বৈচিত্র্য ঠিক রেখে গ্রামের উন্নয়ন করতে হবে। গ্রামের সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। তরুণদের কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। দূর্নীতি বন্ধ করতে হবে। শহরের প্রান্তিক মানুষগুলো, বস্তিবাসিদের বাসস্থান এবং মৌলিক সুযোগ সুবিধা গুলো অতিদ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।
ভাষা সৈনিক আবুল হোসনে বলেন, ‘গ্রাম শহরের সমতা আনতে হলে সরকারকে তাদের পলিসি পরিবর্তন করতে হবে। তরুণদের সত্যিকারের চাহিদাগুলো বুঝে কর্মপরিকল্পনা করতে হবে। স্থানীয় সরকারকে দক্ষ এবং দুর্নীতিমুক্ত করলে গ্রামের মানুষ সেবা আরো বেশি পাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘গ্রামকে শহর বানানো কখনোই সম্ভব নয়, গ্রামের যে সেবাগুলো আছে সেগুলো যাতে গ্রামের মানুষ শতভাগ পায়, সেই ব্যবস্থা সরকারকে নিতে হবে।’ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডাঃ আব্দুল মান্নান তার বক্তব্যে বলেন, ‘শহর থেকে গ্রামের জন্যে যে সেবা, বরাদ্দ এবং অনুদান দেয়া হয় তা দুর্নীতির কারণে গ্রামে মানুষের কাছে পৌছতে পৌছতে অর্ধেকে নেমে আসে। অনেক সময় দেখা সেই সেবা যাদের পাবার কথাছিলো তারা পায় না।’ তিনি আরো বলেন, ‘দুর্নীতি না কমালে এই বাংলাদেশে এক শ্রেণীর মানুষই বেশি ধনী হবে। আর গুটি কয়েক ধনী দিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নের হিসেব কখনোই করা যাবে না।’
বরেন্দ্র যুব সম্মেলনের আহবায়ক জাওয়াদ আহমেদ রাফির শুভেচ্ছা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে সম্মেলনের ধারণা পত্র পাঠ করেন বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম। সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে বারসিক এর সমন্বয়কারী তৌহিদুল আলমের সঞ্চালনায় ‘গ্রাম শহরের সমতা: তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময়ের মধ্যে দিয়ে তরুণরা তাদের গ্রাম কে আগমীতে কিভাবে ভাবে দেখতে চায়, তার শহরটির উন্নয়ন কেমন হবে বা দখতে চায়, সে দিকগুলো তুলে ধরেন। তরুণরা দাবি করেন, গ্রামের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য নষ্ট করে কোন ধরনের উন্নয়ন করা যাবেনা।
দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের গোযেন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু আহাম্মদ আল মামুন। এই পর্বের অনুষ্ঠান শেষে বারসিকের পক্ষে ২৪টি তরুণ সংগঠনকে সন্মাননা স্মারক তুলে দেয়া হয়। একই সাথে বিগত বছরের কার্যক্রম অনুযায়ী তিনজন যুব ও একটি যুব সংগঠনকে শ্রেষ্ঠ যুব সন্মাননা দেয়া হয়। নিজ গ্রামকে নিরক্ষরমুক্ত করাসহ গ্রামের সকল ধর্ম বর্ণ শ্রেণী পেশার মানুষদেরকে নিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজের অবদান স্বরুপ শ্রেষ্ঠ যুব সম্মাননা পান রাজশাহী তানোর উপজেলার মোহর গ্রামের সবজুল হোসেন। অন্যদিকে একজন নারী হয়েও, নানা বাধার মধ্যেও শহর তরুণদের সাথে থেকে শহরের প্রান্তিক মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করে বিশেষ অবদান রাখায় রাজশাহী সদরের মোসা. জরিনা খাতুন শ্রেষ্ঠ যুব সন্মাননা পান। বরেন্দ্র অঞ্চলের তরুণ ও তরুণ সংগঠনগুলোকে সমন্বয় এবং বিভিন্নভাবে সমন্বিত সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে সন্মাননা পান রাজশাহী সদরের তরুণ জাওয়াদ আহমেদ রাফি। রাজশাহী শহর পর্যায়ে বস্তি পর্যায়ে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের সেবা অধিকার ও শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায় শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠন হিসেবে সন্মাননা পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যুব সংগঠন নবজাগরণ ফাউন্ডেশন।
উক্ত সম্মেলনের আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পরিবেশ পদক প্রাপ্ত কৃষক ইউসুফ আলী মোল্লা, বিভাগীয় জয়ীতা নারী রহিমা বেগম, তিনবার জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষক রহিম উদ্দিন সরকার, রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা, ইন্টার্ন বিডির পরিচালন- সুজিত দাস। বরেন্দ্র যুব সম্মেলনটিতে উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন তহুরা খাতুন লিলি, খায়রুল ইসলাম, আলভি আবির।