পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুস্বাদু বিদেশী ফল ‘ক্যান্টালোপ’ চাষ হচ্ছে পাবনায়
শাহীন রহমান, পাবনা থেকে
দারুণ পুষ্টিগুণে ভরপুর, নানা রোগের প্রতিষেধক ও সুস্বাদু বিদেশী ক্যান্টালোপ ফল চাষ হচ্ছে উত্তরের কৃষিসমৃদ্ধ জেলা পাবনায়। আর অপ্রচলিত এই ফল চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন পাবনা সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের কৃষক আনিসুর রহমান। স্বল্প জমিতে কম বিনিয়োগে অধিক লাভ হওয়ায় এসব ফসলের চাষ স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছে বেকার যুবকদেরও। কৃষিবিদরা বলছেন, দেশে এই ফলের বাজার সম্প্রসারিত হলে, স্বল্প জমিতেই লাভের মুখ দেখবেন কৃষকরা।
সম্প্রতি সরেজমিনে পাবনার দাপুনিয়া ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক আনিসুর রহমানের ছয় বিঘা জমিতে ছড়িয়ে আছে উজ্জল হলদে রঙের নজরকাড়া গোলাকার এক ধরণের ফল। ফলটির নাম মেলন, মধ্যপ্রাচ্যে পরিচিত সাম্মাম নামে, কোথাও কোথাও হানিডিউও বলা হয়।
মেলন মূলত বাঙ্গি, তরমুজ কিংবা মিষ্টি কুমড়া গোত্রের ফল। দেখতে অনেকটা বাঙ্গির মত হলেও, সুমিষ্ট, সুস্বাদু এ ফলের স্বাদে রয়েছে ভিন্নতা। এর আদি নিবাস ইউরোপে হলেও চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতেও উৎপাদন হচ্ছে। অনুসন্ধিৎসু কৃষক আনিসুরের প্রচেষ্টায় সম্প্রতি পাবনার দাপুনিয়াতেও ফলটির সফল আবাদ হয়েছে। কেবল হানিডিউ নয়, আনিসুরের ক্ষেতে হাসি ছড়াচ্ছে খসখসে আবরণের রকমেলন, মিষ্টিকুমড়োর মত সবুজাভ গোলাকৃতির মাশমেলনও।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানালেন, ‘আমাদের দেশের বাজারে অপ্রচলিত হলেও মধ্যপ্রাচ্য, চীন, জাপান ও পশ্চিমা দেশগুলোতে এসব ফল খুবই জনপ্রিয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর, নানা রোগের প্রতিষেধকও বটে। অল্প জমিতে স্বল্প সময়ে বারোমাস চাষ হয়, লাভের অঙ্কটাও বেশ।’
কৃষক আনিসুর রহমান জানান, ২০১৮ সালে শখের বশে দেড় বিঘা জমিতে বিদেশী প্রজাতির বারোমাসী তরমুজ আবাদ করে লাভবান হয়েছেন। তাই এ বছর তরমুজের পাশাপাশি বড় পরিসরে দশবিঘা জমিতে মেলন, রকমেলন ও মাশমেলনের চাষ করেছেন। স্থানীয় বাজারে তেমন চাহিদা না থাকলেও রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সুপার শপে ভালো বিক্রি হচ্ছে। পাইকারী দামে তিনি প্রতিকেজি হলুদ মেলন ১২০ টাকা, রক মেলন ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। সব ঠিক থাকলে জমিতে যে ফল রয়েছে, তাতে মৌসুম শেষে সব খরচ বাদে আট থেকে দশ লাখ টাকা লাখ লাভের আশা তার।
আনিসুর জানান, বর্তমান বাজার মূল্যে এক বিঘা জমিতে ধান আবাদ করতে তের থেকে পনের হাজার টাকা খরচ হচ্ছে, অথচ তা বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে সর্বোচ্চ বার হাজার টাকা। সেখানে এক বিঘা জমির ক্যান্টালোপ বিক্রি হচ্ছে কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার টাকা।
পাবনার টেবুনিয়া বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জে এম আব্দুল আওয়াল জানালেন, ক্যান্টালোপ প্রজাতির মেলন জাতীয় ফলগুলো আমাদের দেশের বাঙ্গির মত দেখতে হলেও মিষ্টতায় তিনগুণ বেশি। আর বাঙ্গির বাজারজাতকরণের সবচেয়ে বড় সমস্যা ফেটে যাওয়া। তবে, ক্যান্টালোপ প্রজাতির ফলগুলো যতই পেকে যাক, তা ফাটে না। আর পুষ্টিগুণের দিক থেকেও অনেক উপকারী একটি ফল।
আব্দুল আওয়াল আরো জানান, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত বারোমাসই এ ফলগুলো চাষাবাদ করা যায়। মাত্র ৫৫ দিনে ফসল পাওয়া যায়, ফলে সাশ্রয়ীও বটে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ী, পাবনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আজাহার আলী বলেন, ‘আমরা উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এসব ফলের বাজার ও চাষাবাদ সম্প্রসারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। কেবল ধানের প্রতি নির্ভরশীল না হয়ে, বিকল্প ফসল হিসেবে ক্যান্টালোপের মত উচ্চমূল্যের ফসল আবাদে কৃষক ভালো লাভ পেতে পারে। যদিও, দেশের বাজারে অপ্রচলিত, এরপরেও আনিসুরের ভালো লাভ হয়েছে।’