সমন্বিনত উদ্যোগ সফলতা আনে
হরিরামপুর,মানিকগঞ্জ থেকে মো. মুকতার হোসেন
হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চল লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পাটগ্রামচর আশ্রয়ন প্রকল্প। সেখানে ২০০ পরিবারে বসতি। ২০০১ সালে আশ্রয়ন প্রকল্পটি সরকারের সহায়তায় নির্মিত হয়। দৈনন্দিন কাজকর্ম, গৃহস্থালীর কাজ, হাঁস মুরগি পালন, গোসলসহ নানা ধরনের গৃহস্থালীর কাজের সুবিধার্থে ৬ একর বিশিষ্ট ২টি পুকুর করে দেওয়া হয় আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায়। তবে বিগত ৩-৪ বছরে বন্যার কারণে পলি পড়ে পুকুরটি ভরাট হয়ে যায়। আশ্রয়নে বসবাসরত জনগোষ্ঠীদের পানি ব্যবহারের সাথে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমগুলো বাধাগ্রস্ত হয়।
উক্ত সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে লেছড়াগঞ্জ চর উন্নয়ন কৃষক সংগঠন। কৃষক সংগঠনের সদস্যরা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠী উদ্বুদ্ধ হয়ে পুকুরগুলো পুনঃখননের উদ্যোগ নেন। তাদের এ উদ্যোগের সাথে শামিল হয় বারসিক। তাঁরা আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর তিন একরবিশিষ্ট পুকুরটি পুনঃখনন সবাই স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে পাটগ্রামচর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর সভাপতি সিদ্দিক মোল্লা বলেন, ‘সকলের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।’ এলাকার স্থানীয় মানুষেরা স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে পুকুর পুনঃখননের উদ্যোগ দেখে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাসার সবুজ দেখতে আসেন এবং জনউদ্যোগের পাশাপাশি তিনি সরকারি সহায়তা প্রদানের আশ^াস দেন। তিনি বলেন, ‘পুকুরটি পুনঃখনন হওয়ার পর মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় মাছের পোনা এবং পুকুর পাড়ে বৃক্ষ রোপণের উদ্যোগ নিতে হবে।’
অন্যদিকে লেছড়াগঞ্জ চর উন্নয়ন কৃষক সংগঠনের সভাপতি হাজেরা বেগম বলেন, ‘কৃষক সংগঠনের মাসিক সভায় পুকুর পুনঃখননের বিষয়টি আলোচনা হয়। সবার সহযোগিতায় যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে পুকুরটি খনন করা সম্ভব হয়েছে। জনগোষ্ঠীরা তাদের সমস্যা নিজেরা চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং সমাধানের জন্য নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করার জন্য বারসিক নানাভাবে সহযোগিতা করেছে।’
বর্তমানে লেছড়াগঞ্জ চর উন্নয়ন কৃষক সংগঠন ও আশ্রয়ন প্রকল্পের বসবাসরত জনগোষ্ঠীর যৌথ উদ্যোগে স্থানীয় জাতের মাছ চাষ করে নিজেদের মাছের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা রাখছেন। জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটা একতা, সম্প্রতি, সমন্বয়, সামাজিক ভাতৃত্ববন্ধন, আন্তরিকতা তৈরি হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি, স্থানীয় প্রশাসনের সাথে এলাকার মানুষের একটা যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। ফলে তারা সরকারি সেবাগুলো নিতে সক্ষম হচ্ছেন।
পাটগ্রামচর আশ্রয়ন প্রকল্পের পুকুর পুনঃখননের উদ্যোগ দেখে আশ্রয়ণ প্রকল্প-১, নটাখোলা সামাজিক পুকুর সমন্বিত উদ্যোগে খনন করে মাছ চাষের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। শুধু মাছ চাষ নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় গৃহস্থালীর কাজ, হাঁস মুরগি পালন, পুকুর পাড়ে বৃক্ষ রোপণসহ বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন।
২০১৮ সালে পাটগ্রামচর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ পুকুর থেকে নিজেদের খাওয়ার মাছ রেখে পঁচিশ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন। উক্ত টাকা দিয়ে মাছ ধরার জাল, অন্যান্য উপকরণ, খাদ্য, পরবর্তী বছর মাছ চাষের ব্যয়সহ উপকারভোগীরা পারিবারিক কাজে ব্যবহার করছেন। সামাজিক পুকুর খননের ফলে তাদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে, যৌথ সমন্বিত উদ্যোগ মাধ্যমে কার্যক্রম বাস্তবাযনের সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।