বন্যা মোকাবেলায় জয়তন বেগমের লোকায়ত জ্ঞান চর্চা

সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে বিউটি সরকার
একদিকে করোনা আবার অন্যদিকে বন্যা। করোনার কারণে মানুষ কাজ না থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আবার বন্যার কারণে ফসলি জমি ডুবে যাওয়ায় অনেক কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে লোকায়ত জ্ঞান চর্চা করে হঠাৎ বন্যার বন্যার মোকাবেলা করে কয়েকজন কৃষক কিছুটা হলেও আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তেমনই একজন কৃষাণী জয়তন বেগম (৫২)।


মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের নয়াবাড়ী আর্দশগ্রামে জয়তনের বাড়ি। তাঁর স্বামী একজন কৃষক । স্বামীকে কৃষি কাজে সহযোগিতা করতে ড়িয়ে তিনি নিজেই একজন সফল কৃষাণি হয়ে উঠেছেন। কৃষি কাজই এখন তাদের একমাত্র পেশা। কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিবছর তিনি জমি লিজ নিয়ে বিভিন্ন প্রকার সব্জি যেমন-চালকুমড়া, ধুন্দল, লাউ, উসতা, সীম, চিচিংগা, বরবটি, পেপেঁ, ডাটা, লালশাক, ঢেড়শ, মূলা, মিষ্টিকুমড়া, আলু, পেয়াজ, বেগুন মরিচ ইত্যাদি চাষ করেন।
প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও তিনি ৬ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সব্জি চাষ করেন। সিংগাইর উপজেলার জমি উচুঁ হওয়ায় প্রতিবছর বন্যা হয় না। কিন্তু এবছর হঠাৎ বন্যা হওয়ার তার সকল সব্জি গাছ মরে যায়। এতে করে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন। তবে জয়তন বেগম হাল ছাড়েননি। বন্যার পানি আসার সাথে সাথে তিনি লোকায়ত জ্ঞান চর্চা করেন। মাটির পাতিলে, কচুরিপানা এবং পলিব্যাগে মাটি প্রস্তুত করে লাউ, সীম, চিচিংগার বীজ রোপণ করেন এবং ধীরে ধীরে সেখানে চারা গজাতে শুরু করে। এদিকে জমি থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে তিনি চারা উঠিয়ে জমিতে রোপণ করেন।


এ প্রসংগে কৃষাণী জয়তন বেগম বলেন, ‘আগে মা, দাদীকে দেখেছি বর্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথে পাতিলে বীজ গুজে দিত। সেখানে চারা গজাত এবং বড় হত। এদিকে আবার বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে চারা জমিতে রোপণ করে দিত। এখন প্রতিবছর বর্ষা হয় না। তাই জমিতে ও পানি উঠেনা। তবে এবার হঠাৎ বন্যা হওয়ায় জমিতে পানি এসে সব সব্জি নষ্ট হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমি এ পদ্ধতি গ্রহণ করি। পাতিলে, কচুরিপানা এবং ১০০ পলিব্যাগে মাটি প্রস্তুত করে সীম, লাউ এবং চিচিংগার বীজ গুজে দেই। এ বীজ থেকে চারা গজিয়ে বড় হতে থাকে। এদিকে জমি থেকে পানি নামার সাথে সাথে জমিতে চারা রোপণ করি। আমার এ পদ্ধতি দেখে অনেক প্রতিবেশী অনুপ্রাণিত হয়ে এ চর্চা করছেন।’

happy wheels 2

Comments