আমিই রোকেয়া

মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার

‘আমিই তো একজন রোকেয়া’। আমার বাবার বাড়ি কুষ্টিয়া। আমরা ৫ বোন ১ ভাই। কুষ্টিয়া চিলমারি স্কুলে পড়তাম। স্কুলে খেলাধুলা, গান, নাচ সব করতাম। লংজাম, হাইজাম সব কিছুতে প্রথম হতাম। স্যাররা আমাকে পংখীরাজ বলতো। আশেপাশের লোকজন নানা কথা বলতো। ছেলে বলে টিটকারি মারতো। কিন্তু আমি কোন কথায় কান দিতাম না। আমার বাবা- মা আমাকে খুব ভালবাসতেন। তারা আমাকে উৎসাহ দিতেন। অনেকে বলতেন মেয়েকে বিয়ে দাও। আমার বাবা মা তাদের কথা শুনতেন না। অবশ্য পরে পারিবারিক সমস্যার কারণে ১০ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমার বিয়ে হয়ে যায়। চলে আসি মানিকগঞ্জ। আমার ২ ছেলে। তারা লেখাপড়া করছে। আমি নিজে সেলাই শিখেছি। এখন সেলাই কাজ করি। হাঁস-মুরগি, গরু ছাগল পালি। শাকসবজি বুনি। চকের কৃষি কাজে স্বামীকে সাহায্য করি। আলোর পথিক নারী সংগঠনের আমি ক্যাশিয়ার। সংগঠনের মাধ্যমে বাল্য বিয়ে রোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে মানুষকে পরামর্শ দিই’-এভাবেই শুরু করেন ফাতেমা বেগম (৪৫)।

‘রোকেয়ার স্বপ্ন: নারীর ক্ষমতায়ন” শ্লোগানকে সামনে রেখে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চরমত্ত গ্রামে ‘আলোর পথিক নারী সংগঠন’ এর আয়োজনে এবং বারসিক’র সহযোগিতায় বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে আমিই রোকেয়া-জীবনের গল্প বলার আসর ও নারীদের অংশগ্রহণে খেলাধুলা, গান অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল।

সুমি আক্তারের সভাপতিত্বে শুরুতেই রাজিয়া বেগমকে স্বাক্ষর শেখানোর মধ্য দিয়ে দিবসের উদ্বোধন করা হয়। এরপর দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রবন্ধ পাঠ করা হয়। জীবনের গল্প বলার আসরে গল্প বলেন প্রত্যয় কিশোরী সংগঠনের সভাপতি খাদিজা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমি বেগম রোকেয়ার মত কিছুই করতে পারি নাই। কিন্তু আমি মেয়ে হয়েও ফুটবল খেলি। আশেপাশের লোকজন অনেক কথা বলে। শুনতে খারাপ লাগে। কিন্তু ফুটবল আমার স্বপ্ন। আমার পরিবার আমাকে সমর্থন করে বলেই আমি ফুটবল খেলতে পারি। সব মা-বাবার উচিত তাদের মেয়েদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলা-ধুলা, নাচ, গান সব কিছু করতে দেওয়া যা সে ভালোবাসে।’ অনুষ্ঠানে আরো গল্প বলেন, ‘শেফালী বেগম, পুনু বেগম এবং মনোয়ারা বেগম।’

তারুণ্য শিক্ষার্থী সংগঠনের সভাপতি মো. মরীফ হোসেন বলেন, ‘আজ বেগম রোকেয়া দিবস। রোকেয়া একজন মহীয়সী নারী যা আপনারা জেনেছেন। সরকার প্রতিবছর এই দিনে নারী জয়ীতা পুরস্কার দেয়। আপনারা যারা মনে করেন এই সমাজ সংসারে আপনাদেরও অনেক অবদান আছে তারা আবেদন করতে পারেন জয়ীতা পুরস্কারের জন্য।।’

গল্প বলা শেষে নারীদের অংশগ্রহণে খেলাধূলা ও গান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে নারী, কিশোর-কিশোরীসহ মোট ৪৩ জন অংশগ্রহণ করে। বেগম রোকেয়া স্বপ্ন দেখতেন নারীরা ক্ষমতায়িত হবে। নারীরা উপার্জন করবে। ধর্মীয় কুসংস্কারের বেড়াজাল অতিক্রম করে নারীরা পুরুষের সমকক্ষ হয়ে কাজ করবে। বেগম রোকেয়ার সেই স্বপ্ন পূরণে যে সব নারী অবদান রেখে যাচ্ছে নিরবে নিভৃতে তারাই আজকের দিনের রোকেয়া।

happy wheels 2

Comments