জীবনযুদ্ধে এগিয়ে চলছেন নারীরা
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ সত্যরঞ্জন সাহা
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১ উপলক্ষে হরিরামপুর স্বেচ্ছাসেবক টিম ও বারসিক উদ্যোগে নারীদের সাইকেল চালানো ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বালিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হরিরামপুরে। উক্ত অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি লিমা আক্তার, শিরিন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক অনন্ত বিশ^াস, বালুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সাখায়াত হোসেন, যুব স্বেচ্ছাসেবক টিমের আহবায়ক শাহীন টিটু এবং বারসিক’র প্রোগ্রাম অফিসার সত্যরঞ্জন সাহা প্রমুখ।
মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা পদ্মা নদীর ভাঙ্গা গড়ায় নারীরা জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলে। প্রতিকূলতায় যাদের জীবন তাদের জন্য গ্রামের পরিবেশে নারী কিশোরীদের সাইকেল চালানো সহজ হয়। হরিরামপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাছে থাকলেও মাধ্যমিকে এবং উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ৩ থেকে ৫ কিলো হেটে গিয়ে স্কুলে লেখাপড়া করতে হয়। এজন্য হরিরামপুর স্বেচ্ছাসেবক টিম ও বারসিক উদ্যোগে ২০১৪ সাল থেকে ‘সাইকেল আমাদের নারীর স্বাধীনতা’ আন্দোলন করে আসছে। নারী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াকে গতিশীল করা এবং তাদের পথচলাকে আরও সহজ ও এগিয়ে নিতে উক্ত আন্দোলনের আওতায় হরিরামপুরে পাটগ্রাম অনার্থ বন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও এমএ রাজ্জাক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ জন ছাত্রীকে দিয়ে স্কুলে সাইকেল চালিয়ে আসা যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়। এই আন্দোলনকে সফল করার জন্য হরিরামপুরের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলোর শিক্ষকদের সহযোগিতায় ছাত্রীদের নিয়ে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসার জন্য আলোচনা করে উৎসাহীত করেন। ছাত্রীদের সাইকেল চালানোর পথচলাকে সহজ করে দেয়। বারসিক গ্রাম পর্যায়ে অভিবাবকদের সাথে আলোচনা, দিবস উদযাপনে সাইকেল চালানো, সাইকেল র্যালি ও প্রতিযোগিতা করে উৎসাহিত করে।
বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় হরিরামপুর এডিবি প্রজেক্ট থেকে হরিরামপুরের প্রতিটি উচ্চ বিদ্যালয়ে মেধা অনুসারে ছাত্রীদের সাইকেল দেওয়া হয়। ফলে ছাত্রীগণ স্কুলে আসার মাধ্যমে আন্দোলন সফল হওয়ায় রাস্তা খোলে। বর্তমানে দেখা যায় হরিরামপুরের প্রতিটি গ্রামের ছাত্রীগণ সাইকেল চালিয়ে প্রাইভেট পড়া ও স্কুলে যাওয়ার কাজটি করে থাকেন। হরিরামপুরে অভিভাবকগণ ছোট মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য সাইকেল কিনে দেন। গ্রামের রাস্তার আনাচে কানাচে দেখা যায় ছাত্রীদের সাইকেল চালোর বিষয়টি। একে অপরের দেখাদেখি ছাত্রীগণ সাইকেল চালানো উৎসাহিত হচ্ছে। নারীরা বাধাবিপত্তি, কুসংস্কার দূর করে সাইকেল চালিয়ে লেখাপড়ার করে পরিবারকে যাতায়াত খরচ বাঁচাতে সহযোগিতা করছে। দেখা যায়, অনেক দরিদ্র পরিবারের পিতামাতার পক্ষ্যে লেখাপড়ার খরচের পর যাতায়াত খরচ দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তবে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়ার কারণে এসব খরচ আর লাগে না। এভাবেই দেখা গেছে, একটি আন্দোল ফসল হিসেবে আজ হরিরামপুর উপজেলার তরুণ নারী শিক্ষার্থীরা সাফল্য শিখরে এগিয়ে যাচ্ছে। তরুণ শিক্ষার্থীর সাইকেল চালানোর অগ্রগতির পথচলা এক উজ্জল দৃষ্টান্ত মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা।