স্বপ্ন এবং সম্ভাবনার গল্প বর্ণমালা গণ পাঠাগার
হরিরামপুর মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
শিক্ষার্থীদের অবসর সময়ে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি ও জ্ঞান আহরণের জন্য মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলা হারুকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের তরুণরা একটি গণ-পাঠাগার গড়ে তুলেছেন। গণ পাঠাগার তৈরির কারণ হিসেবে উদ্যোগী তরুণরা জানান, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা তিনমাস অবসর সময় পান। এই অবসর সময়ে তারা যেন কোন খারাপ অভ্যাসের দিকে ঝুঁকে না পড়েন এবং খেলার মাঠের অভাবে শিক্ষার্থী-তরুণেরা মুক্ত আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় তাদেরকে বিপদগামী হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য এ গণপাঠাগার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। উদ্যোগী তরুণরা মনে করেন, এলাকার শিক্ষার্থী-তরুণরা অবসরে ও বিকালে গণপাঠাগারে মুক্ত আড্ডা ও বই পড়ার মাঝে জ্ঞান আহরণ করতে পারেন। এই গণপাঠাগার তৈরির ক্ষেত্রে তরুণরা এলাকার গণমান্য ও সম্মানিত ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ করেন। সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ ও প্রস্তাবে এই পাঠাগারের নামকরণ করা হয় “বর্ণমালা গণ পাঠাগার”।
উদ্যোগী তরুণরা বর্ণমালা গণ পাঠাগারের জন্য স্থান নির্ধারণ করেন দক্ষিণ চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত স্কুল ঘর। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটি তরুণদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিদ্যালয়ের একটি অতিরিক্ত কক্ষে ‘বর্ণমালা গণ পাঠাগার’ করার জন্য অনুমতি প্রদান করেন। বর্ণমালা পাঠাগারের স্থান নির্ধারণ করার পর শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে চাঁদা দিয়ে পাঠাগারের জন্য বই রাখার সেলফ তৈরি করেন। এই সেলফ তৈরির জন্য তরুণরা ৬ হাজার টাকা নিজেরা চাঁদা তুলে সংগ্রহ করেন। নিজে শ্রম দিয়েই বই রাখার জন্য সেলফ তৈরি করেন। গণ পাঠাগার পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়েছে।
সেলফ তৈরি হলে তরুণ শিক্ষার্থীরা পাঠাগারকে বইয়ে সমৃদ্ধ করার জন্য এলাকার সমাজ সেবক, রাজনৈতিক ব্যক্তি, শিক্ষানুরাগীদের সহযোগিতায় এক হাজারটি বই সংগ্রহ করেন। সংগৃহীত এই বইগুলোর মধ্যে রয়েছেসাধারণ জ্ঞান, উপন্যাস ও গল্প, কবিতা, কৌতুক, আইন ও গবেষণাধর্মী বই। ঘর নির্ধারণ, সেলফ তৈরি এবং বই সংগ্রহের পর তরুণ শিক্ষার্থীরা যাতে সবাই সুন্দরভাবে বই পড়তে পারেন সেজন্য পাঠাগার ঘরে বসার স্থান তৈরি করেন। অন্যদিকে এই পাঠাগার তৈরির তথ্য এবং এখানে সবাইকে বই পড়ার আহ্বান করার জন্য শিক্ষার্থী ও তরুণ নানান প্রচার শুরু করেন। তারা পরামর্শ সভা, ইফতার মাহফিল এবং দোয়া অুনষ্ঠানের মাধ্যমে সবার কাছে এই গণপাঠাগারের তথ্য পরিবেশন করেন। এসব প্রচার অনুষ্ঠানে এলাকার শিক্ষার্থী, তরুণ, অভিভাবক, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি, রাজনৈতিক ব্যক্তি, উন্নয়ন সংগঠনের কর্মীগণ উপস্থিত থেকে গণ পাঠাগার সম্পর্কে তথ্য জেনে নেন।
তরুণদের এই উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে সবার কাছে। সঙ্গত কারণেই এলাকার সম্মানিত ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ এই তরুণদের নানানভাবে পরামর্শ দেন যাতে তারা এই উদ্যোগকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেন। তরুণদের এভাবে পরামর্শ দেন হরিরামপুর বিচারপ্রতি নুরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ সেলিম উজ্জামান খান, হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান রব, সংস্কৃতিকর্মী শামসুল হক, শিক্ষক সেলিম মিয়া, বারসিক’র প্রতিনিধি বিমল রায়, বারসিক’র গবেষক বাহাউদ্দীন। পরামর্শ প্রদানকারীগণ বর্ণমালা পাঠাগারে শিক্ষার্থী-তরুণদের জ্ঞান-অর্জন ও খবরা-খবর জানার জন্য প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকা রাখা, কম্পিউটার সংগ্রহ করা, বর্ণমালা পাঠাগারের গঠণতন্ত্র তৈরি করা, প্রতি মাসে একটি একটি রচনা বা আর্ট প্রতিযোগিতার আয়োজন করা এবং এইচএসসি পাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের কোচিং সহযোগিতা করাসহ নানান পরামর্শ প্রদান করেন।
তরুণদেরকে বিপদগামী থেকে রক্ষা করার জন্য এবং তাদেরকে বহুমাত্রিক জ্ঞানে অলংকৃত করার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। সবচে’ বড় বিষয় হচ্ছে তরুণরা নিজের উপলদ্ধি থেকে এই বর্ণমালা পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে যা প্রমাণ করে ইচ্ছা থাকলে তরুণরা যেকোন কিছু সমাধা করার সামর্থ্য রাখে। হরিরামপুরের তরুণদের এই উদ্যোগ নিশ্চয়ই অন্য এলাকার তরুণদের অনুপ্রাণীত করবে।