দেশি জাতকে টিকে রাখতে ভূমিকা রাখে গ্রামীণ নারীরা
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে মুকতার হোসেন
কৃষিতে নারীদের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। এলাকার স্থানীয় দেশি জাতকে টিকে রাখতে তাঁরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এসেছেন। এমনটি দেখা গেছে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ি ও আজিমনগড় ইউনিয়নের নি¤œভূমি চরাঞ্চলে। সেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা কৃষি কাজের তাদের অংশগ্রহণ করছেন। পুরুষরা মাঠঘাট থেকে ফসল সংগ্রহ করে আনলেও এর বীজ সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়ে থাকে পরিবারের নারীরাই। এর মধ্যে রয়েছে ধান, পাট, গম কালাই, সরিষা, মসলা জাতীয় ফসলসহ বিশেষ করে সবজি বীজ তার মধ্যে অন্যতম।
হরিরামপুর চরাঞ্চলে পাটগ্রামচর, হালুয়াঘাটাচর, নটাখোলা, বালিয়াচক, বসন্তপুর, হরিহরদিয়া, সুতালড়ীসহ বিভিন্ন গ্রামে দেখা গেছে, নারীরা নানানভাবে বীজ সংরক্ষণের কাজ করছেন। তাঁরা মৌসুমভিত্তিক লাউ, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া, ধুন্দল, ঝিংগা, পুইশাক, চালকুমড়া, শিমসহ বিভিন্ন জাতের দেশি বীজ সংরক্ষণ করছেন। এই প্রসঙ্গে হরিহরদিয়া গ্রামের কৃষক জবেদা বেগম বলেন, ‘আমি মিষ্টি কুমড়া মাচায় চাষ করছি। পরিবারের খাওয়ার পরও আমি বাজারে ১২শ’ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছি। পাড়াপ্রতিবেশি ও আত্মীয়স্বজনকে ৪-৫ টা দিয়েছি। তারপর ৫টি মিষ্টি কুমড়া আমি বীজ এর জন্য রাখছি। আমার মিষ্টি কুমড়া জাত অনেক ভালো। খেতেও অনেক স্বাদ।’
এই প্রসঙ্গে পাটগ্রামচরের নারী উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি আরজিনা বেগম বলেন, ‘বাজার থেকে কেনা বীজ এর ভরসা পাই না, কিনে ধরনের হবে, স্বাদ কেমন হবে, কোন সময়ে লাগাতে হবে। কতদিন ফল ধরবে। কোন ধারনা আমাদের থাকে না। তাই নিজ বাড়িতে আবাদের সবজির বীজ রাখি আমাদের কোন চিন্তা করতে হয় না। আমার বীজ সে বিষয়ে আমার জানা রয়েছে। অন্যর কাছে জানার প্রয়োজন হয় না।’
গ্রামীণ বীজ সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় দেখা যায়, একটি গাছের ফল যখন পরিপক্ক হয় তখন পুষ্ট ফলটা কৃষকরা বীজ রাখার জন্য নির্বাচন করেন। মাঠ থেকে ফসল সংগ্রহ করার পর রোদ্রে ভালোভাবে শুকিয়ে ঘরে রাখেন। এরপর প্লাষ্টিক ড্রাম, টিনের ড্রাম, মাটির কলস, বিভিন্ন ধরনের, বোতল, প্লাষ্টিক বস্তার সাথে পলিব্যাগ দিয়ে বীজ রাখেন।
অন্যদিকে হরিহরদিয়া গ্রামের কৃষক জরিনা বেগম বলেন, ‘মহামারী করোনাকালে যখন হাট বাজারে যাওয়া স্বাভাবিক চলাফেরা বাধাগ্রস্ত ছিল। সে সময় পরিবারের শাকসবজি, দুধ, ডিম, হাঁস, মুরগিসহ বসতবাড়ির উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রী দিয়ে পরিবারের খরচ চলত। তাই নারীরা, শুধু বীজ সংরক্ষণে নয়; পরিবারের অন্য কাজেও ভূমিকা রাখে।’ তিনি মনে করেন, দেশি জাতের বীজ সংরক্ষণ ও ব্যবহার বিষয়ক কৃষকদের পাশাপাশি তরুণদের এই ধরনের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা গেলে স্থানীয় বীজ বৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে করবে এবং চরের কৃষিকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
উল্লেখ্য, বারসিক স্থানীয় জাতের বীজ সংরক্ষণে মানিকগঞ্জ জেলায় কাজ করে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। সংগঠনটি কৃষকদের প্রশিক্ষণ সহায়তা, অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর, বীজ বাড়ি তৈরি, গ্রাম পর্যায়ে আলোচনা সভা আয়োজন, গ্রামীণ বীজ মেলা আয়োজনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।