সাতক্ষীরায় অচাষকৃত উদ্ভিদের রান্না প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে মফিজুর রহমান
বারসিক’র উদ্যোগে গতকাল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের বিড়ালক্ষী আশ্রায়ন প্রকল্পের মাঠে ‘কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যের রান্না প্রতিযোগিতা, স্বাদ ও খাদ্য শিক্ষা কর্মসূচি” অনুষ্ঠিত হয়। অচাষকৃত উদ্ভিদের রান্না প্রতিযোগিতায় ১০ জন কৃষাণী ভিন্ন ভিন্ন ১০ ধরণের অচাষকৃত উদ্ভিদের শাক রান্না করেন।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2022/08/mo1-1024x458.jpeg)
গ্রামীণ এক উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজিত এ ব্যতিক্রমধর্মী রান্না প্রতিযোগিতায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্জ আবু সালেহ বাবু প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ গ্রামের সর্বস্তরের জনগণ।
নতুন প্রজন্মের মাঝে কুড়িয়ে পাওয়া অচাষকৃত উদ্ভিদের প্রতি মনোযোগ ও উৎসাহ তৈরী, কুড়িয়ে পাওয়া অচাষকৃত শাক সংরক্ষণ ও গ্রামীণ নারীর খাদ্য নিরাপত্তার সংগ্রামকে স্বীকৃতি জানাতে বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। কেবলমাত্র নতুন প্রজন্ম নয়, অংশগ্রহণকারী প্রবীণেরাও বলেছেন, এই প্রথম কোনো একদিন শুধুমাত্র কুড়িয়ে পাওয়া শাক দিয়েই সকলে আহার সেরেছেন। রান্না প্রতিযোগীতায় ৪জন বিচারকের প্যানেলের মাধ্যমে ফলাফল তৈরি করা হয়।
রান্না ও পরিবেশন শেষে অংশগ্রহণকারী নারীরা রান্নার প্রধান উপকরণ কুড়িয়ে পাওয়া শাকটি সম্পর্কে উপস্থিতদের অবহিত করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। অনুষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব ছিল রান্নার স্বাদ গ্রহণ ও মূল্যায়ন।।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2022/08/mo-1024x580.jpeg)
রান্না প্রতিযোগিতায় কুলসুম বেগম কলমীশাক রান্না করে প্রথম স্থান অধিকার করেন, রোজিনা বেগম কচুশাক শাক রান্না করে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন, রিমা খাতুন থানকুনি শাক রান্না করে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন ।
ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্জ আবু সালেহ বাবু বলেন, ‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মানবসৃষ্ট বিপর্যয় ও নানাবিধ উন্নয়ন দুর্যাগের পাশাপাশি বিশ^ আজ জলবায়ু সংকটের মুখোমুখি। গ্রাম জনপদের জনগন নিরন্তর এই সংকট মোকাবেলা করে টিকে থাকার সংগ্রাম করে চলেছেন। স্থানীয় মানুষের লোকায়ত জ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে সকলে মিলে সকলের সাথে এক বৈচিত্র্যময় সুখী দেশ ও সমাজ গড়তে কাজ করে যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাণ ও প্রকৃতির সুরক্ষায় নবীন ও প্রবীণদের একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। কারণ নবীণরা প্রবীণদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলার কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই আমাদের বিকল্প পরিবর্তিত অবস্থার সাথে টিকে থাকতে হলে আমাদের খাপ খাইয়ে চলার কৌশলগুলো অবলম্বন করতে হবে।
গাজী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে প্রকৃতিতে সব কিছুই পাওয়া যেত কিন্তু কালের বিবর্তনে বর্তমানে প্রকৃতিতে অনেক কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না বা কম পাওয়া যাচ্ছে। একসময় দক্ষিণাঞ্চলকে প্রকৃতির ভান্ডার বলা হতো। লবণাক্ততার মাত্রা বৃদ্ধি ও ফসল উৎপাদনে মানুষ অতিরিক্ত মাত্রায় নানা ধরনের রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে প্রকৃতির অনেক উপাদান হারিয়ে যেতে বসেছে। এর মধ্যে অন্যতম অচাষকৃত উদ্ভিদ বৈচিত্র্য। প্রকৃতিতে এক সময় প্রচুর পরিমাণে অচাষকৃত বা কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদ পাওয়া যেত যা এখন কম পাওয়া যায়।’