দুর্যোগ মোকাবেলায় কৃষকদের দাবি মানতে হবে
সত্যরঞ্জন সাহা, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা সিকদার পাড়া প্রথম বারের মত “দুর্যোগে আগাম সতর্কবার্তা, সবার জন্য কার্যব্যবস্থা” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে সংলাপ ও মতবিনিময়ন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সংলাপে আমন ধান চাষী, পাট চাষী, গাছি, কৃষক, সংবাদিক ও সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন।
সংলাপ মতবিনিময়ে হরিরামপুরের কৃষকগণ চাষাবাদে দুর্যোগ প্রশমনে খাপ খাওয়ানোর কৌশলসমুহ আলোচনা করেন বলেন, ‘বর্ষায় উঁচু ভিটায় মসলা ও শাক সবজি চাষ, ডিপি করে সবজি চাষ এবং নিচু জমিতে গভির পানির ধান চাষ করে থাকি। রবি মৌসুমে পেঁয়াজ, রসুন, ধনিয়া, মরিচ, কালোজিরা, রাঁধুনী, শরিষা, গম চাষ করে থাকি। তাছাড়াও পাট, বাঙ্গি, আলু চাষ করে থাকি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ফলে খরা ও বর্ষা/বন্যা আবাদে প্রধান সমস্যা। অনিয়মিত বৃষ্টি পাতের ফলে জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় আগাছা বেড়ে যায়। আগাছা পরিষ্কার, পোকার আক্রমণ, মাটির উর্বরতা হ্রাস উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়াও হরিরামপুরে বিভিন্ন স্থানে নদী ও খালে অপরিকল্পিত বাঁধ চাষাবাদে পানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা। ইছামতি নদী ও খালের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ থাকায় সময় মতে পানি চকে প্রবেশ করে না। একবার পানি প্রবেশ করলে বের হয় না ফলে ফসল নষ্ট হয়।’
হরিরামপুরের সিকদারপাড়ারর গাছি মিজান খন্দকার বলেন, ‘আমরা আমন মৌসুমে দিঘা ধান জমি বপন করি। এই ধান পানির সাথে ধান গাছ বৃদ্ধি পায়। ফলে ধান গাছ ১০ থেকে ১৫ হাত বড় হয়। এবছর চকে পানি কম হওয়ায় দিঘা ধানের খড় কম বড় হয়েছে। ফলে এবছর ধানের খড় কম। আর হাজারি গুড় তৈরি করতে দিঘা ধানের খড় জ¦ালানি হিসাবে ব্যবহার করে। ফলে এবছর খেজুর গুর বা হাজারী গুর তৈরিতে সমস্যা হবে।’
হরিরামপুরের ঝিটকা কৃষক খন্দকার কহিনুর বলেন, ‘আমন ধান বোনার জন্য মাটির জোঁ আসে না। চৈত্র মাসে খরা, বৈশাখ মাসে হঠাৎ অতি বৃষ্টিতে জমিতে পানি হয়। ধান বোনার জন্য কৃষক সুযোগ করে উঠতে পারে না। ফলে এবছর অধিকাংশ চকে আমন মৌসুমের দিঘা, মোল্লা দিঘা, হিজল দিঘা ধান নাই। আবার নদী ও খালে বাঁধ থাকার কারণে পানি জমিতে আসা ও যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ায় ফসল নষ্ট হয়। আমাদের কৃষকদের দাবি নদী ও খালে বাঁধগুলো তুলে দেওয়া হোক। স্বাভাবিকভাবে পানি আসা যাওয়া করুক। কৃষক শান্তিতে ফসল ফলাতে পারবে।’
হরিরামপুরের বাহিরচরের কৃষক সুচরন সরকার বলেন, ‘পাট ঝাক দেওয়া পানি নাই। কৃষকের দুর্ভোগ, কাঁচাপাট নিয়ে টানাটানি। কৃষকের খরচ বৃদ্ধি। আবার কোনো বছর হঠাৎ পানি এসে পাটের মাথায় পানি উঠে যায়, তাড়াতাড়ি করে পাট লওয়া কঠিন হয়ে যায়। তবে প্রকৃতিক দুর্যোগ আসার আগে আমরা কিছু দিন সময় পায়। ফসল নষ্ট হলেও কিছুটা গড়ে তুলতে পারি। কিন্তু নদী ও খালে বেরিবাঁধ থাকার কারণে চকে হঠাৎ পানি আসে, কৃষিতে আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়াও হরিরামপুরে নদী ভাঙনে কৃষি জমি কমে আসছে। কৃষক সহায় সম্বল হারিয়ে হচ্ছে দিশেহারা।’
আমাদের দাবি নদী ও খালে বাঁধগুলো তুলে দেওয়া হোক। স্বাভাবিকভাবে পানি আসা যাওয়া করোক। ঝিটকায় প্রচুর মরিচ ও পেঁয়াজ চাষ হয়। এই পিয়াজ ও মরিচ সংরক্ষণে অভাবে অর্ধেক নষ্ট হয়। কৃষকদের সংরক্ষাগারের দাবি জানান সরকারে নিকট।
হরিরামপুরের সাংবাদিকগণ কৃষকের সমস্যাগুলো ও দাবিদাবা প্রচার মাধ্যমে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দেয়। সংলাপ ও মতবিনিময় শেষে অংশগ্রহণকারীগণ ফল ও খেজুর গাছের চারা রোপণ করেন।