মরুময়তা দূরীকরণে বৃক্ষরোপণ
কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
কলমাকান্দা উপজেলার পাতলাবন গ্রামটি মহাদেও নদীতীরে অবস্থিত। জনশ্রুতি আছে, বর্তমানে যে গ্রামটিকে পাতলাবন বলা হয় এ গ্রামটি সম্পূর্ণই একসময় মহাদেও নদী গর্ভে ছিল এবং এই গ্রামটির উপর দিয়েই নাকি মহাদেও নদীর মূল প্রবাহ ছিল। কিন্তু অনেক বছর আগে হঠাৎ নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে সোজা চলে যায় আর পুরনো নদীটি বালুময় মরুভূমিতে পরিণত হয়। পরে সেখানে আস্তে আস্তে বসতি গড়ে ওঠে। তবে এ গ্রামে এক সময় শুধু ৪টি পরিবার ছিল যা কিনা এ গ্রামের আদি পরিবার। বর্তমানে নতুনভাবে বসতি তৈরি হওয়ায় এখন পরিবার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এই বালুময় স্থানে বসতি গড়ে উঠলেও এখনো সবুজায়ন গড়ে ওঠেনি। তাই গরমকালে খা খা করে এখানকার আকাশ বাতাস। তীব্র গরমে গাছের পাতাও ঝড়ে যায়। এমনকি দুর্বাঘাস পর্যন্তও মরে যায়!
২০১৫ সালে বারসিক এর সহযোগিতায় সবিতা মানখিনের বাড়িতে পরীক্ষামূলক বালুময় স্থানে গর্ত করে আবাদী জমি থেকে ভালো মাটি এনে গোবর সার মিশিয়ে সেখানে গাছ চারা রোপণ ও সব্জি চাষ করা হয়েছে। সবিতা মানখিনের বাড়িকে কেন্দ্র করে একটি পারিবারিক গবেষণা কার্যক্রমও পরিচালিত হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে বারসিক’র সহযোগিতায় ও সবিতা মানখিনের প্রচেষ্টায় ধাপে ধাপে প্রতিবছর বালুময় স্থানে গর্ত করে গোবর মিশ্রিত ভালো মাটি দিয়ে শাকসব্জি ও গাছের চারা রোপণ করা হয়। এক সময় সফলতা ধরা দেয় সবিতা মানখিনের হাত ধরে।
সবিতা মানখিনের বাড়িকে কেন্দ্র করে গবেষণাটি সফল হওয়ায় অন্যান্য যেসব বাড়িগুলো এখনো মরুময় সেসব স্থানটি সবুজায়নের জন্য ২০২২ সাল থেকে বারসিক’র সহযোগিতায় এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে বালুময় স্থানে গর্ত করে ভালো মাটি, গোবর ও কম্পোস্টের মিশ্রণে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় এবছরও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। উক্ত বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আতাউল গণি। তিনি তার বক্তব্যে বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, “মরুময় বা বালুময় স্থানটি মানুষের বাসযোগ্য ও সুন্দর পরিবেশ তৈরি করার জন্য বারসিক যে উদ্যোগ নিয়েছে তা খুবই প্রশংসনীয়। পাতলাবন গ্রামটি একটি পর্যটন এলাকা কিন্তু বালু ছাড়া কোন কিছু নেই। তাই পরিবেশের কথা চিন্তা করে সকলে বাড়ির আঙ্গিনায় বৃক্ষরোপণ করা খুবই জরুরি। পরিবেশের জন্যই এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। তাই সবাই যার স্থানে যে কয়টি গাছের চারা রোপণ করা হবে তা অবশ্যই যতœ করতে হবে আমাদের নিজেদের স্বার্থে”।
এ বছর পাতলাবন গ্রামে ৯ ধরণের মোট ২২০টি (আম, জাম, আমড়া, আমলকী, কৃষ্ণচূড়া, কাঠবাদাম, হরতকী, নিম, লিচু) চারা রোপণ করা হয়েছে। মরুময়তাকে দূর করে মানুষ ও অন্যান্য পশু-পাখির বাসযোগ্য করার জন্যই এ উদ্যোগ। সবাই যদি নিজ নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বৃক্ষরোপণ করেন এবং সে চারাগুলো যতœ করেন তবেই এই মরুময়তা দূর করা সম্ভব।