তুলনাহীন তুলসী
সাতক্ষীরা থেকে মননজয় মন্ডল
তুলসী একটি ঔষধি গাছ। যার তুলনা নেই! তুলসী সর্দি, কাশি, কৃমি, বায়ুনাশক, মুত্রকর, হজম শক্তি বৃদ্ধি, হাপানী ও এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে বিশেষ করে কফের ক্ষেত্রে যেসকল রোগের সৃষ্টি হয় সে ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী হয় এই উদ্ভিদ। তুলসী গাছের ইংরেজী নাম (holy basil) এবং বৈজ্ঞানিক নাম (ocimum sanctum) । বাঙালিদের অতি পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ গাছ এই তুলসী। মহাঔষধি খ্যাত তুলসী বহু ধরনের রোগ ও অসুখের কাজে ব্যবহৃত হয়। অনেকেই তুলসী পাতাকে পুজার কাজে ব্যবহার করেন।
উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কৃষাণী অল্পনা রাণী, ফরিদা পারভীন, ময়না রাণী, কৃষক দিলীপ তরফদার, দেবুরঞ্জন মন্ডল, নিরঞ্জন জোয়ারদার এর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় রাধা তুলসী, কৃষ্ণ তুলসী, বৃন্দাবন তুলসী, কানন তুলসী, রাম তুলসী প্রভৃতি তুলসী গাছ স্বযত্নে লাগিয়ে রেখেছেন বাড়ির আঙিনায়। প্রতিনিয়ত পারিবারিক পর্যায়ে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় কাজে তুলসী ব্যবহার করতে দেখা যায়। গাড় সবুজ আকৃতির এই তুলসী গাছের পাতার কিনারাগুলো খাঁচকাটা ধরনের। এর শাখা প্রশাখা থেকে ৫টি পুষ্পদন্ড বের হয়, যে পুষ্প দন্ডের চারদিকে ছাতার আকৃতির মত ১০-২০টি স্তরে ফুল থাকে। আবার প্রতিটি স্তরে ৬টি করে ফুল ফোঁটে। বাড়ির আঙিনা, বসতভিটার উঁচু স্থান, গোলার সামনে ও ঠাকুর ঘর/মন্দিরের সামনে ও টবে এসব তুলসী লাগানোর উপযুক্ত স্থান।
তুলসী পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। যে কারণে এটা ব্যবহার করলে মানুষের উচ্চরক্তচাপ কমিয়ে নার্ভকে শান্ত রাখে, ফলে মানসিক চাপ কমে যায়। হার্টের সমস্যা সমাধান করে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শিশুদের স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে অত্যন্ত ফলদায়ক এই তুলসী বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
তুলসী গাছের গুনাগুণ সম্পর্কে জানতে চাইলে চ্যানেল আই কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষক শেখ সিরাজুল ইসলাম, নিরঞ্জন কুমার জোয়ারদার ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত কৃষাণী ফরিদা পারভীন বলেন,“ জ্বর হলে তুলসী পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি পান করলে ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়। তুলসী পাতা ও দারুচিনি মেশানো ঠান্ডা চা খেলে জ্বর ভালো হয়”।
স্থানীয় মানুষেরা পেটের সমস্যা, দৃষ্টি শক্তির সমস্যা, জ্বর, সর্দি, কাঁশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা, হজম, বমিভাব, কৃমি, কোলেস্ট্রোল, মানসিক সমস্যা, দাঁত ও মুখের সমস্যা, অল্প বয়সে মুড়িয়ে যাওয়া, বলি রেখা, ধাতু দূর্বলতা, প্রস্বাবের সমস্যা, শরীরের ঘা-পাঁচড়া, ত্বকের সমস্যা, চুল পড়া প্রভৃতি রোগ বা অসুখে তুলসী ব্যবহার করেন।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষানী অল্পনা রানীর বাড়ীতে দেখা যায় দুই শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির তুলসী গাছ রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন,“তুলসী এক অতি মূল্যবান গাছ, এটার পাতা, ডাল ও বীজ সবকিছু শত রোগের এক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জ্বর, সর্দি, কাশি, বমি, হজম, মুখের দূগন্ধ, ধাতুরোগ, মাথাব্যথা ও ত্বকের সমস্যা সহ সব কাজে তুলসী লাগে। আমি প্রতিদিন তুলসীর পাতা, ডাল, বীজ ও চারা বিভিন্ন জনকে বিনামূল্যে বিতরন করি।”
মহাঔষধি খ্যাত তুলসী আমাদের দৈনন্দিন জীবনপ্রনালীতে মিশে আছে একাকার হয়ে। যার গুনাগুন ও প্রয়োজনীয়তা অসীম। সমাজের সকলের আন্তরিকতা ও প্রয়োজনের তাগিদে অতি মূল্যবান এই ঔষধি উদ্ভিদ বৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখা তথা সংরক্ষণ করতে হবে।