দেয়ালিকা চর্চায় প্রতিভা বিকশিত হয়
নেত্রকোনা থেকে তহুরা আক্তার ও রুখসানা রুমি
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ দেয়াল পত্রিকা সাংস্কৃতিক চর্চার একটি অংশ। একটি জাতির পরিচয় পাওয়া যায় তার সংস্কৃতি উপর। শিক্ষাঙ্গনে এই সংস্কৃতি চর্চা বেশ গুরুত্ব বহন করে। আগে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের দেয়ালিকা প্রকাশ করতো, সংস্কৃতি চর্চা হতো। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসব সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশ নিতেন। সারাবছরই নানা রকমের অনুষ্ঠানাদি লেগেই থাকত। শুদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চা মননশীলতা গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করত। দেশের প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে দেয়ালিকা, বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বেশ উৎসাহ নিয়ে করা হতো। নাটক, পুঁথিপাঠ, আবৃত্তি, সংগীত, নাটক, অভিনয় ইত্যাদি নানা ধরনের চর্চা হতো। এসব চর্চায় তাদের সৃজনশীলতা যেমন বৃদ্ধি পেত তেমনি তারা শুদ্ধ মনের অধিকারী হতেন। পরবর্তীতে সমাজ গঠনে তারা গঠনমূলক অংশ নিতেন।
বর্তমানে বিদ্যালয়ে, প্রতিষ্ঠানে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ও গ্রামে কোন সাংস্কৃতিক চর্চা নেই। সেটি আমাদের জন্য সুখকর নয় এবং সেটা আমরা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে একসময় আমাদের অনেক কিছুই হারাতে হবে। এসব বিষয়ে এখন নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
নেত্রকোণা জেলার পৌর সভায় উপস্থিত নেত্রকোনা কালেক্টরেট স্কুল এর অপরাজিতা টিম সংস্কৃতি চর্চার অংশ হিসেবে দেয়ালিকা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীরা কবিতা, গল্প, কৌতুক, বাণী কথা, অনুকবিতা সংগ্রহ করেন। তাদের আগ্রহ ও সৃজনশীলতার জন্য দেয়ালিকা তৈরির এই কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এ কাজটি করে মেয়েছেলেরা অনেক বেশি খুশি।
বর্তমানে বিপথগামী হচ্ছে সংস্কৃতি চর্চার অভাবে মাদকের ভয়াল থাবা তাদের গ্রাস করছে। তারা বিষণœতায় ভুগছে। মোবাইল আর ফেসবুকে সময় কাটছে। স্মার্টফোনের মাদকতায় তারা বুঁদ হয়ে আছে। এসবের মধ্যে নেই কোনো সৃজনশীলতা।
এই প্রসঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমলেন্দু সরকার বাদল বলেন, ‘দেয়ালিকা চর্চায় প্রতিভা বিকশিত হয়। ক্লাশ রুটিনের সঙ্গে সহপাঠ্য কার্যক্রম সমন্বিত করতে হবে। সাংস্কৃতিক সপ্তাহ পালনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। তবেই শিক্ষার্থীরা সহশিক্ষার সাথে যুক্ত হবে নিজেকে জানবে, চারপাশকে জানবে, নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সহযোগিতা পাবে।”
শিক্ষার্থীদের সুকুমার বৃত্তির বিকাশে শিক্ষকদের বড় একটি ভূমিকা আছে। ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি সহপাঠ্যক্রমিক কর্মকান্ডে অংশ নিতে হবে। দেশের শিক্ষাবিদ, সাহ্যিতিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গকে এসব কাজে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করানো যেতে পারে। সবশেষে বলা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হোক সুষ্ঠু সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র শিক্ষার্থীর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ হোক। মাদক আর জঙ্গিবাদের ভয়াল থাবা থেকে আমাদের প্রিয় সন্তানেরা নিরাপদ থাকুক। আমাদের এই প্রিয় সন্তানেরাই তো নেতৃত্ব দেবে আগামীর বাংলাদেশকে।