বলেশ্বর নদে রূপালি ইলিশের ভরা মৌসুম
দেবদাস মজুমদার,বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূলীয় অঞ্চল :
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বলেশ্বর নদে চলছে রূপালী ইলিশের ভরা মৌসুম। জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালি ইলিশ। বলেশ্বর নদে আশানুরূপ ইলিশ মাছ ধরা পড়ায় মঠবাড়িয়ার বলেশ্বর নদ তীরের জেলে পরিবারগুলোতে বইছে সুখের বন্যা। আর ইলিশ ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাকডাকে মুখর মৎস্যঘাট ও বাজার। বলেশ্বর নদে এখন চলছে ইলিশ ধরার উৎসব। আর এই কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপন্ন উপকূলবাসীর কিছুটা হলেও কষ্ট ভুলে মন খুলে হাসছেন।
সংশ্লিষ্ট জেলেরা জানিয়েছেন, এবার মৌসুমের শুরুতে বলেশ্বর নদে ইলিশের যেন আকাল চলছিল। দীর্ঘদিন জেলেদের অলস সময় কেটেছে। এতে চরম আর্থিক কষ্ট চলছিল মহাজনের দাদনগ্রস্ত জেলে পরিবারগুলোতে। ইলিশ ব্যবসার সাথে জড়িত আড়তদারদেরও লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। এমন অবস্থায় হঠাৎ করে গত চার দিন ধরে বলেশ্বর নদে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করে। ফলে জেলেরা আনন্দ মনে দিন রাত বলেশ্বর নদে ইলিশ আহরণে মহা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রের দাবি, বিগত বছরে জাটকা অভিযান সফল হওয়াতে বলেশ্বর নদে ইলিশের নির্বিঘ্ন প্রজনন ঘটেছে। ফলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা এ মৌসুমে অনেকটাই স্বস্তিতে রয়েছেন। আর বাজারে ইলিশের দামও কিছুটা কমে গেছে। ফলে সাধারণ ক্রেতারও সাধ্যমত ইলিশ কিনতে পারছেন।
উপজেলার মাছুয়া ইউনিয়নের স্টীমার ঘাট, বেতমোড় সাংরাইল, সাপলেজা ইউনিয়নের ক্ষেতাচিরা মৎস্য ঘাট এলাকায় এখন ইলিশ, জেলে ও মাছ ব্যবসায়িদের আনাগোনায় মুখরিত। জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আরতদাররা বরফজাত ইলিশ বক্স ভর্তি করে খুলনা-বশিাল ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলে, মাছ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বায়ুতাড়িত প্রভাবে জলসীমায় ইলিশের পরিমাণও বেড়ে গেছে বলে মনে তারা করছেন। এ অবস্থা থাকলে এ মৌসুমে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের লোকসান পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। বড়মাছুয়া ঘাটের ইলিশ আড়ৎদার মো. ফারুক তালুকদার জানান, বড় ইলিশ পাইকারী প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৭০০ ও ছোট ইলিশ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে।
খেজুরবাড়িয়া জেলে পল্লীর জেলে মিলন মিয়া জানান, জালে ইলিশ বেশি ধরা পড়লেও বেশি লাভবান হচ্ছেন আড়ৎদাররা। জেলেরা আড়ৎদারদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে কম দামে ইলিশ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তারপরও আশানুরূপ ইলিশ মাছ পাওয়ায় জেলেদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি বিরাজ করছে।
এ ব্যপারে মঠবাড়িয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, “এবার বলেশ্বর নদসহ উপকূলীয় নদ নদীতে ইলিশ প্রজনন মৌসুমে জাটা নিধন অভিযান সফল হওয়াতে বলেশ্বর নদে ইলিশের নির্বিঘœ প্রজনন ঘটেছে। ফলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া বৃষ্টিপাতের ফলে নদীর পানি ও গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাগর থেকে ইলিশ নদীতে আসছে। এ কারণে জেলেদের জালে প্রচুর রূপালি ইলিশ ধরা পড়েছে। জেলে পরিবারগুলোতে এবার আনন্দ বইছে।”