নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে স্বরসতী রানীর সফলতা

শ্যামনগর সাতক্ষীরা থেকে মনিকা পাইক
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্চ ইউনিয়নের ধানখালী গ্রামের সরস্বতী মন্ডল (৪৫)। নিজ আঙিনায় সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। স্বামী দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ থাকায় দুই ছেলেকে নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে তিনি সবজি চাষ শুরু করেন সাথে স্থানীয় জাতের হাঁস ও মুরগি পালন করেন। বসতভিটায় বারোমাস নানান ধরনের বৈচিত্র্যময় সবজি চাষে ব্যস্ত থাকেন সরস্বতী মন্ডল। এক যুগের বেশি সময় ধরে তিনি এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করেন। নিজের শ্রম ও শক্তি দিয়ে ফিরিয়ে এনেছেন সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা।


সরস্বতী মন্ডলের স্বামী ননীগোপাল মন্ডল (৫২)। কয়েক বছর ধরে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫ বছর যাবৎ তিনি অসুস্থ। কোন কিছুই তিনি করতে পারেন না। স্বামীর সমস্যার পর থেকে চরম আর্থিক সমস্যায় পড়েন তিনি। অভাবের তাড়নায় এক ছেলে দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। সংসারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় কি করবেন তা নিয়ে বিপাকে পড়ে যান। অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করতেন। কিন্তু তা দিয়ে সংসার তো চলতো না বরং আরো ঋণে জড়িয়ে পড়লেন।


উপার্জনের অন্য কোন উপায় নেই ভেবে বাড়ির আঙিনায় ৭ কাঠা জায়গায় শুরু করলেন সবজি চাষ। সেখান থেকে তিনি আস্তে আস্তে স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে পান। এখন পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন তিনি। এখন ছেলের লেখাপড়ার খরচ নিজে বহন করেন পরিবারে সুখ, অসুখ নিজেই দেখেন। পাশাপাশি ৬০টি স্থানীয় জাতের মেরী হাঁস ও ১০টি মুরগি পালন করেছেন। ডিম থেকে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে বাইরে বিক্রি করে তা থেকে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। এ সব থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি পরিবারের হাল ধরেন।


এই প্রসঙ্গে স্বরসতী রানী বলেন, ‘এখন আমি অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সবজি রোপণ থেকে সবটা নিজে হাতেই করি। জৈব পদ্ধতিতে সবজি চাষ করি, আমার বাজার থেকে সার বিষ কেনার টাকা নেই। গোবর বাইরে থেকে খুঁটে নিয়ে আসি আর বাড়িতে তরকারির খোসা, হাঁস মুরগির বিষ্ঠা একটা গর্তে রাখি। পরে বাগানে ছড়িয়ে দিই।’
স্বরসতী রানী আরও বলেন, ‘আমার বাগানের সবজি বিষমুক্ত হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর জন্য আমাকে বাজারে যেতে হয় না। বাড়ি থেকে বিক্রি হয়ে যায়। খুচরা ও পাইকারি দু’ভাবে বিক্রি হয় সবজি। সবজি চাষে লাভবান হওয়ায় আমাকে দেখে পাশাপাশি অনেকেই এ পেশা বেছে নিয়েছেন। এর ফলে সবজির উৎপাদন যেমন বেড়েছে তেমনি পরিবারে আয়ের পথের সহযোগী হচ্ছেন তারা।’

happy wheels 2

Comments