পাখি পরিবেশকে নিরাপদ রাখে
সত্যরঞ্জন সাহা, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
মাঠে-ঘাটে, গাছ-পালা, নদী-নালায়, নীল আকাশে পাখির মেলা দেখা যায়। হরিরামপুরে পদ্মা ও ইছামতি নদী, দিয়াবাড়ি বিল, ভাতচালা বিল, গুপিনাথপুর বিল, এবং চরের মেন্দিপুর ও পাটগ্রাম এলাকায় পাখিদের খাবারের প্রধান উৎস হলো মাছ, পোকা ও শস্য। দেশীয় গাছ-পালা এবং নদীর গর্তগুলো পাখিদের থাকার জায়গা। বিশেষ করে নদীর পাড়ে ময়না, মাছরাঙ্গা, ডুবুরে পাখি, এবং শামুভাঙ্গা গর্তে বাসা বাঁধে।
পাখিরা মাঠের ফসলের পোকা খেয়ে ফসল রক্ষা করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। হরিরামপুরের বিল এবং চর এলাকা পাখিদের জন্য আদর্শ বিচরণভূমি। দিনের বেশিরভাগ সময় পাখিরা এসব জায়গা থেকে খাবার সংগ্রহ করে।
স্থানীয় কৃষকদের মতে, শালিক, ময়না, শামুভাঙ্গা, টিয়া, সরালী, ফেচুয়া, চড়াই, বাবুই, বক, বালিহাঁস, ঘুঘু, পেঁচা, কাঠঠোকরা, মাছরাঙ্গা, মানিকজোড়, এবং জলালী কবুতরের মতো দেশীয় এবং অতিথি পাখিদের দেখা মেলে।
পাখি রক্ষায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি
হরিরামপুরে পালক, যুব সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবীরা স্কুল, কলেজ, হাট-বাজার এবং গ্রামে গ্রামে পাখি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। কৃষক এরশাদ মুন্সি বলেন, “পাখি ফসলের পোকা খায়। এতে রাসায়নিক বিষের ব্যবহার কমে এবং উৎপাদন খরচও কমে যায়। পাখি থাকলে জমিতে বিষ প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। ফলে পাখি পরিবেশকে নিরাপদ রাখে ।”
স্বেচ্ছাসেবক ফয়সাল হোসেন বলেন, “বারসিকের উদ্যোগে পাখি রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়ছে। ফলে মাঠে-ঘাটে এখন অনেক পাখি দেখা যায়। পাখি শিকারও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পাখির সংখ্যা বাড়লে কৃষিকাজে খরচ কমবে এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সহজ হবে।”
পাখি কৃষকের বন্ধু
কৃষাণী রেনুবালা বিশ্বাস বলেন, “পাখি পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা পোকা খেয়ে পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখে। দেশীয় গাছপালা এবং ফসল চাষ করায় পাখির খাবারের প্রাচুর্য থাকে। পাখি রক্ষায় বারসিক ও স্থানীয় সংগঠনগুলোর প্রচেষ্টার ফলে শিকার বন্ধ হয়েছে এবং পাখির সংখ্যা বেড়েছে।”
পাখি রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ
হরিরামপুরে স্বেচ্ছাসেবক দল ও কৃষকেরা দেশীয় ফলজ বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করছে। পাখি কৃষি পরিবেশ সুরক্ষায় এবং প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাখি সুরক্ষিত থাকলে কৃষক বাঁচবে, কৃষি উৎপাদন বাড়বে, এবং দেশ লাভবান হবে।