ছোট্ট একটি উদ্যোগ কিন্তু স্বপ্ন অনেক বড়
কলমাকান্দা, নেত্রকোণা থেকে গুঞ্জন রেমা
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আমরা জানি ভাষার জন্য এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা তৎকালীন পশ্চিমা পাকিস্তানি পুলিশের অতর্কিত হামলায় নিজেদের বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল। যার পরিণতিতে আমরা বাংলাকে সে সময়কার পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেয়েছি। যে রাষ্ট্রভাষা ছিল ৭কোটি বাঙালির মাতৃভাষা। আজ সেই ভাষা শহীদদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানাতে আমরা সবাই ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে যাই। তাদের এই ত্যাগ, এই ঋণ কোন দিন শোধ হবার নয়। আমাদের উচিৎ রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই ভাষাকে ভালোভাবে বোঝা, জানার এবং বিস্তার করা। তবেই ভাষা শহীদদের নিবেদিতপ্রাণ স্বার্থক হবে।
সারা দেশের ন্যায় নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় ২১ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ এই দিনটিকে কেন্দ্র করে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আয়োজন করেছে নানা কর্মসূচি। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে রাত ১২ টায় শহীন মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ছোটদের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতা, শুদ্ধ বানান প্রতিযোগিতা। তবে এ সমস্ত অনুষ্ঠানের ভিড়ে সবার নজর কাড়ে ‘উদয় যুব সংগঠন’ এর উদ্যোগে বারসিকসহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় কলমাকান্দা শহীদ মিনার চত্ত্বরে প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত ‘২১শে বই মেলা’।
উক্ত বই মেলার শুভ উদ্বোধন করেন কলমাকান্দা-দূর্গাপুর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য বাবু ছবি বিশ্বাস। বই মেলাকে কেন্দ্র করে একটি আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় কলমাকান্দা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির এর সভাপতিত্ত্বে প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন মাননীয় সাংসদ বাবু ছবি বিশ্বাস। আলোচনায় বই মেলার গুরুত্ব সম্পর্কে প্রধান অতিথি বলেন, “ছোট্ট একটি উদ্যোগ; কিন্তু স্বপ্ন অনেক বড়। বই মেলার আয়োজনের এই মহৎ উদ্যোগটিকে আমি স্বাগত জানাই। জ্ঞানকে সমৃদ্ধি করতে হলে বই পড়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই”। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে দেশের সঠিক ইতিহাস জানার জন্য সকলকে বই পড়ার আহ্বান জানান। সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, “বই মেলা একটি পবির্তনের মাইলফলক- যা কলমাকান্দা শুরু করলো। আশা করি এর ধারাবাহিকা অব্যাহত থাকবে। জ্ঞানার্জনে বই এর কোন বিকল্প নাই। মানুষ এখন আর বই পড়ে না। ফেসবুক আর গুগলে ব্যস্ত থাকে। সেজন্য বই পড়াকে একটা আন্দোলনের ভিতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।” তাছাড়াও তিনি আগামী বছর বড় পরিসরে বই মেলা করার আশ্বাস দেন। বইমেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে উদয় যুব সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সায়েম আহমেদ সিয়াম তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, “আমরা কলমাকান্দা উপজেলার যুব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য, সঠিক বর্ণমালা, সঠিক ইতিহাস ও বই পড়ার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যই এই মেলার আয়োজন করেছি।”
বই মেলায় মোট ৬টি স্টল প্রদর্শিত হয়। এই স্টলগুলোতে চোখে পড়ে বিভিন্ন গল্প, কবিতা, উপন্যাসসহ স্থানীয় কবি, সাহিত্যিক ও গবেষক মো. মঞ্জুরুল হক এর রচিত অসংখ্য বই। যা মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। পাশাপাশি সূর্যের হাসি ক্লিনিকের উদ্যোগে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা, ডাইবেটিস পরীক্ষা, ওজন মাপা, প্রেসার মাপাসহ অনেকগুলো স্বাস্থ্য বিষয়ক মেগাজিন ও লিফলেট বিতরণ করা হয়। একটি স্টলে প্রদর্শিত হয় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্যনিরাপত্তা, জৈবকৃষি চর্চাসহ আরো অনেক ধরনের প্রকাশনা। পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর একটি লিফলেট বিতরণ করা হয় অংশগ্রহণকারীদের মাঝে। পরিশেষে কলমাকান্দা শিল্পকলা একাডেমির সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বই মেলার সমাপ্তি ঘটে।
বই মেলা খুবই একটা চোখে পড়ে না ঢাকার বাইরে। যদিও দেশের কয়েকটি শহরে ছোটখাটো পরিসরে হয়। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে বই মেলা! তাও আবার কলমাকান্দা’র মতো বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তের একটি প্রত্যন্ত জেলায় তো একবারেই অকল্পনীয়। সেই অকল্পনীয় কাজটাই করলো কলমাকান্দা’র একটি যুব সংগঠন। বই মেলার মধ্য দিয়ে কলমাকান্দাবাসী নতুন একটি বিষয়ের সাথে পরিচিত হতে পেরেছে। যা এর আগে কোনদিনও এখানে হয়নি। তাই প্রশংসিতও হয়েছে অনেকের কাছে। অনেকে বই মেলাটিকে আরো জোরালোভাবে করার আহ্বান জানিয়েছেন।