মানিকগঞ্জের চরাঞ্চলে এবার বাদাম চাষীদের মুখে হাসি
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ
আবহাওয়া অনুকুলে ও নদীতে পানি দেরিতে আসায় মানিকগঞ্জ জেলার চরাঞ্চলে এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে আবাদকারী কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটেছে। বাদাম তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নদী পারের কৃষাণ-কৃষাণিরা। এবছর ঘন,ঘন ঝড় ও শিলাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে ধান ও পাটের আবাদে ব্যাপক ক্ষতি হলেও বাদাম আবাদে প্রভাব পড়েনি।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এবছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বাদাম আবাদ হয়েছে। জেলার চরাঞ্চলে ২ হাজার ৩ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, চাষ হয়েছে ২হাজার একশ’ ৯৪ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২শ’ ৫ মেট্রিক টন। জেলার শিবালয়, দৌলতপুর ও হরিরামপুর উপজেলার পদ্মা-যমুনার চরাঞ্চলে বাদাম চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে শিবালয় উপজেলার শিবালয় ও তেওতা ইউনিয়নের কানাইদিয়া, চরশিবালয়, নিয়ালপুর, জিকুটিয়া, চরসাদুল্লাহ, পহুরপার, তেওতা, মালুচিসহ চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায় দিগন্তজোড়া মাঠের পর মাঠ সবুজ বাদাম গাছের সমারোহ।
নিহালপুর এলাকার কৃষক মো. তৈয়ুব বলেন, “আমি ১৫/১৬ বছর ধরে বাদাম চাষ করছি। বাদাম চাষ জুয়া খেলার মতো, হলে খুব ভালো, না হলে সব গেলো। অতিরিক্ত খরা ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে না পড়লে বাদাম চাষে লাভবান হওয়া খুব সহজ। জমি চাষ করে শুধু একবার বাদামের বীজ বপন করে আসলেই হয়। অন্যান্য ফসলের মতো এত পরিচর্যা করতে হয় না। সময় মতো শুধু জমি থেকে গাছ তুলে এনে বাদাম ছাড়িয়ে পরিস্কার করে রোদে শুকিয়ে গুদাম জাত করেই কাজ শেষ।” তিনি আরও বলেন, “বাদাম চাষে ভয় হয় শুধু খরা ও আগাম বন্যার জন্য। গত বছর আগাম বন্যায় আমার ৩৫ বিঘা জমির বাদাম তলিয়ে যায়। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়। এবার আশা করি সে ক্ষতি পুষিয়ে যাবে। এ বছর নদীতে পানি দেরিতে আসায় ঠিক সময়ে বাদাম তুলতে পারছি। চলতি বছর আমি ৩৩ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ৭হাজার টাকা হিসেবে খরচ হয় ২লাখ ৩১ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ফলন ৬ মণ হিসেবে প্রায় ২শ’ মণ বাদাম পাব বলে আশা করছি।”
তেওতা এলাকার কৃষকরা জানান, চরের জমিতে বাদামের ভাল ফলন হওয়ায় তারা খুশি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ বাদাম পাওয়া গেছে। আগামীতে আরো বেশি জমিতে বাদাম চাষ করবেন বলে তারা জানান। অন্যদিকে লতিফপুর চরের কৃষক জসিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, “ দুই বিঘা জমিতে এবার আমার ৮ মণ বাদাম হয়েছে, যা গতবারের চেয়ে ৪ মণ বেশি।
কানাইদিয়া চরের কৃষক আহাম্মদ আলী জানান, এবছর ২ বিঘা জমিতে তার ১০ মণ বাদাম হয়েছে। গত বছর হয়েছিলো ৫ মণ। প্রতি বিঘা জমিতে বাদাম চাষে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক বিঘা জমির বাদামে খরচ বাদে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভ হবে। ফলে ধান ও পাট আবাদের চেয়ে বাদাম চাষ অধিক লাভজনক। তাই কৃষকরা বাদাম চাষে বেশি ঝুঁকে পড়ছেন। বর্তমানে প্রতি কেজি বাদাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, “বাদাম চাষ লাভজনক হওয়ায় শিবালয়ে গতবারের চেয়ে এবার বেশি বাদাম চাষ হয়েছে। চলতি বছর একশ’ ৬৩ হেক্টর জমিতে সাড়ে ৪শ’ মেট্রিক টন বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত বছর একশ’ ২৭ হেক্টর জমিতে ৩শ’ ২৫ মেট্রিক টন বাদাম উৎপাদন হয়েছিলো। এবার আমরা শিবালয়, দৌলতপুর ও হরিরামপুর চরাঞ্চলে চিনা বাদামের আশানুরূপ ফলনের আশা করছি। কারণ বাদাম চাষের জন্য আবহাওয়া অনুকুলে ছিল। ঘন ঘন বৃষ্টি এবং আগাম বন্যা না হওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে।”