জনউন্নয়ন কেন্দ্র

:: নেত্রকোনা থেকে মো. অহিদুর রহমান::

পরস্পরের সাথে আলোচনা, আড্ডা, খোশপল্প করা, অনানুষ্ঠানিক আদান-প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া মানবিক চর্চা ধীরে ধীরে সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। আদান-প্রদান ও বিনিময়সহ পরস্পরের সাথে সুঃখ-দুঃখ সহভাগিতা করার সুযোগ ও উপলক্ষ কমে যাওয়ার কারণে মানুষ আত্মকেন্দ্রিক এবং পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। এতে করে মানুষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, পরস্পরের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ, সুযোগ গ্রহণ করতে পারছেন না এবং সামাজিক বন্ধন ও সম্পর্কগুলোও শিথিল হচ্ছে। গ্রামের মানুষের ভেতরের আদান-প্রদান ও সুঃখ-দুঃখ সহভাগিতা করার সংস্কৃতি পুর্নজীবিত করার জন্য ময়মনসিংহের সাধুপাড়া কৃষক সংগঠন অন্যান্য পেশাজীবী মানুষের সহায়তা গড়ে তোলে জনউন্নয়ন কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে এলাকার কৃষক জেলে, কুটিরশিল্পী, কামার, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কবিরাজ, প্রান্তিক সাধারণ মানুষসহ অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। পরস্পরের সাথে খোশপল্পের মাধ্যমে তারা স্থায়িত্বশীল জীবন, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় উদ্যোগ, জ্ঞান অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। এভাবে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, সুসম্পর্ক তৈরি হয়, সুদৃঢ় হয় সামাজিক বন্ধনও।

সর্ব স্তরের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে গড়ে ওঠা এই জন-উন্নয়ন কেন্দ্রটি সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে সকল পেশার মানুষ আসেন, গল্প করেন, শিখেন, সহভাগিতা করেন তাদের সাফল্য, সমস্যা, এবং বিনিময় করেন অভিজ্ঞতা ও সম্পদ, উপকরণ। এসব জ্ঞান, অভিজ্ঞতা কখনই পয়সা খরচ করে জানতে ও শিখতে হয় না তাদের, যা মানুষেরা বংশ পরম্পরায় করে আসছেন। এভাবে এই জনউন্নয়ন কেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামনির্ভর মানুষের এই অভিজ্ঞতাগুলো ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি, গ্রাম থেকে গ্রামে স্থানান্তর হয়। এই জন-উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সাধুপাড়া কৃষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আঃ হেকিম তার দুই শতক জমি জনউন্নয়ন কেন্দ্রের নামের লিখিতভাবে প্রদান করেন। অন্যদিকে গ্রামের মানুষ বাঁশ দিয়ে,কাঠ দিয়ে, মাটি কেটে, শ্রম দিয়ে, টাকা দিয়ে ইট দিয়ে সহযোগিতা করেন এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। গ্রামের নারী, পুরুষ, শিশু, শিক্ষার্থী সবাই মিলে এই কেন্দ্রটিকে পরম মমতায় গড়ে তুলেছেন।

এই জনউন্নয়ন কেন্দ্রকে ঘিরে গবেষণা, অভিজ্ঞতা ও পরস্পরের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে দিনকে দিন তৈরি হয়েছে কিছু সম্পদব্যক্তির! এই কেন্দ্রের সহভাগিতা ও বিনিময় সংস্কৃতির মাধ্যমে অনেক কৃষক কম্পোস্ট সার, জৈব বালাইনাশক তৈরি করতে শিখেছেন। অনেকে এলাকার জন্য সহনীয় জাত উদ্ভাবনের জন্য জাত গবেষণা পরিচালনা করছেন, অনেকে আবার নিজ অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠিত হয়ে সংগঠন গড়ে তুলেছেন।

উল্লেখ্য যে, বাাংলাদেশের কৃষকেরা মূলত প্রকৃতি থেকে প্রতিনিয়ত শিক্ষা লাভ করেন, জ্ঞান অর্জন করেন। এই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তাঁরা অন্যজনের মাঝে বিনিময় করেন, সহভাগিতা করেন যাতে করে অন্যরাও এতে উপকৃত হয়। এভাবে আদান-প্রদানের মাধ্যমে তারা টিকিয়ে রেখেছেন কৃষি, কৃষি সংস্কৃতি এবং সামাজিক বন্ধন। এক্ষেত্রে এ ধরনের জনউন্নয়ন কেন্দ্র কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের জীবন-জীবিকা উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে। সাধুপাড়ায় গড়ে ওঠা এই জনউন্নয়ন কেন্দ্র অন্য এলাকার মানুষকে নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণীত করবে।

happy wheels 2

Comments