বাঁশই যাদের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ

কুমিল্লা থেকে মো. মতিউর রহমান

বাংলার পিডিয়ার সংজ্ঞানুযায়ী ‘বাঁশ বহুল ব্যবহৃত কয়েক প্রজাতির ফাঁপা কা- বিশিষ্ট ঘাষ জাতীয় উদ্ভিদ। কাষ্টাল বৃক্ষের ন্যায় বৈশিষ্ট্য থাকায় অনেকসময় এটিকে Bambusaccae গোত্রের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। বাঁশের বিস্তৃতি অত্যন্ত ব্যাপক। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নিকট এর গুরুত্ব অপরিসীম। গৃহের অবকাঠামো নির্মাণ, মঞ্চ নির্মাণ, মই, মাঁদুর ঝুঁড়ি, ফাঁদ হস্তশিল্পসহ নিত্যদিনের ব্যবহার্য বিবিধ জিনিসপত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় বাঁশ। দেশের কোন কোন অঞ্চলে বাঁশের পাতা চালা ঘরের ছাউনিতে এবং গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উষ্ণমন্ডলীয় এলাকার দেশসমূহে কাগজ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয় বাঁশ। বাঁশঝাড়সমূহ ঝড়ো হওয়া প্রতিরোধ এবং ভূমির ক্ষয়রোধ করে। কচি বাঁশের ডগা মুখরোচক সবজি হিসেবে খাওয়ার উপযোগী। এধরনের কঁচি ডগা স্থানীয়ভাবে বাঁশ কোরাল নামে পরিচিত।

bamboo pic
পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বর্ষা মৌসুমে বহুল পরিমাণে এটি খেয়ে থাকে। গৃহস্থালীর কাজে ব্যাপকভাবে বাঁশের ব্যবহার হয় বলে বাঁশকে দাররুদ্ধ বলা হয়। অধিকাংশ প্রজাতির বাঁশ বড় আকারে যৌগিক ধরনের উদ্ভিদ। এগুলো অনেক বছর যাবৎ অন্তজ প্রজননের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় এবং কাদাচিৎ ফুল ধারণ করে। বাাঁশের ফুল ধারণের বিষয়টি অনিশ্চত স্বভাবের। দীর্ঘদিন পরপর ফুল আসতে পারে তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ৬০ বছরের ব্যবধানে বাঁশ ফুল ধারণ করে থাকে। বাঁশের অধিকাংশ প্রজাতিই জমকালো ফুল প্রদানের পর মৃত্যু বরণ করে। সাধারণত ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে পরিপক্ক বাঁশে পরিণত হয়। পরিপুষ্ট বাঁশের রঙ ধূসর বা হলুদ। বাঁশ গাছ সাধারণত ৬০ ফিট পর্যন্ত লম্বা হয়।’

এতো গেল বাঁশের পরিচিতি এবং বাঁশের বর্ণনা নিয়ে বাংলা পিডিয়ার সংজ্ঞা। যে শিরোনামটি দিয়ে লেখাটি শুরু করেছি এবার আসা যাক সে প্রসঙ্গে।

কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানার বিষয়পুর ইউনিয়নের রাজাখলা নামক গ্রামের অধিবাসীদের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সাধিত হয় বাঁশকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশের প্রায় বিভিন্ন জায়গায় এখান থেকে বাঁশ কিনে নিয়ে যায় বাঁশ ব্যবসায়ীরা। মুলি বাঁশ, ঝাই বাঁশ, আইক্কাঅলা (গিট) বাঁশ, আইক্কা (গিট) ছাড়া বাঁশ, হল্লা বাঁশ, খাড়া বাঁশ, বন বাঁশ, কাটা ঝাই, বরাক বাঁশসহ প্রায় সকল প্রজাতির বাঁশই পাওয়া যায় এখানে। হাজার হাজার পিছ বাঁশ নিয়মিত বিক্রি হয় এখানে। প্রতি পিছ বাঁশ সাধারণত ২৫০ টাকা করে বিক্রি করেন বলে জানান এখানকার বাঁশ ব্যবসায়ীরা। তবে এক দুই পিছ বাঁশ আবার ৩ থেকে ৪শ’ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। কুমিল্লা জেলার লালমাই পাহাড়ের কোলঘেঁষে বিস্তৃর্ণ অঞ্চলজুড়ে রয়েছে এ বাঁশ ঝাড়।

কথা হয় এ অঞ্চলের একজন প্রবীণ বাঁশ ব্যবসায়ী ফজলে আলী মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ‘মূলত আমরা বাঁশ ব্যবসা করেই আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকি। এখানে প্রায় সকল প্রজাতির বাঁশ পাওয়া যায়’।

শেষ করতে চাই বাঁশ নিয়েই কিছু কথাবার্তার মধ্য দিয়ে। বাঁশ অতি উপকারী একটি গাছ। ঘরবাড়ি নির্মাণ থেকে শুরু করে অনেক শৌখিন জিনিসপত্রও তৈরি হয় বাঁশ বৃক্ষ থেকে। তবে নানা কারণেই বর্তমান সময়ে বাঁশের ঝাড় নিধন চলছে, যা একদিকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তেমন অর্তনৈতিকভাবেও বিষয়টি ক্ষতির কারণও বটে। তাই বাঁশের উপকারিতা বিবেচনায় নিয়ে বাঁশ ঝাড় রক্ষার্থে আমাদের আরো সচেতন হওয়া জরুরি বলেই মনে করছি।

happy wheels 2

Comments