লিপি-সুমাইয়াদের হাতের ছোয়ায় তৈরি ব্যাগ যাচ্ছে ইতালি, আমেরিকা ও হল্যান্ডে
সাতক্ষীরা থেকে এসএম নাহিদ হাসান
হাতের সুনিপূণ ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে রঙ-বেরঙের পাটের ব্যাগ। তাতে লেখা, ‘লাভ’ যার মানে ভালোবাসা। আবার কোনটিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ফুল কিংবা মানুষের ছবি। আর এসব ব্যাগ চলে যাচ্ছে ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র ও হল্যান্ডে। ব্যাগ তৈরির এই কাজ সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা এলাকায়।
লিপি খাতুন ও সুমাইয়া নামে দুই যুবতীর উদ্যোগে এই কাজ শুরু হলেও এখন এর সাথে যুক্ত হয়েছে আরো অনেকেই। বাড়ির কাজের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে তাদের।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পূর্ব মাছখোলা গ্রামে লিপি খাতুন ও সুমাইয়াদের বাস। প্রতিদিন বিকালে সংসারের কাজ শেষে বাড়ির উঠানে ত্রিপল পেতে তারা বসে যান ব্যাগ তৈরির কাজে। চলে মাগরিবের আযান পর্যন্ত। একেকটি ব্যাগ তৈরিতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ দিন। কাঁচামাল বাদে ২০০ টাকা মজুরিতে এই কাজ করেন তারা। আর ব্যাগের একপাশ তৈরি করে পান ৮০ টাকা। এক পাশ তৈরি করতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই দিন।
লিপি খাতুন বলেন, “সংসারের কাজ শেষে অবসর সময় বাড়ি বসে থাকতাম। ভাবলাম বাড়ি বসে না থেকে কিছু করা যায় কি না। তখন সুমাইয়ার সাথে পরামর্শ করি। দুজনে আলাপ করার পর জানতে পারি বিনেরপোতার ঋশিল্পীতে হাতের কাজ শেখানো হয়। সেখানে গিয়ে যোগাযোগ করলে তারা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি, সুমাইয়া, হালিমা খাতুন, সালমা খাতুন, আনোয়ারা বেগম, ফরিদা খাতুন, আশুরা বেগমসহ ২০জন একত্রিত হয়ে প্রশিক্ষণ নিই। আমাদের গ্রামেই চলে প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষে পাটের ব্যাগ বানানো শুরু হয়। যারা প্রশিক্ষণ দিয়েছে তারাই কাজ দেয়। কাঁচামালও তারা দেয়। আমরা শুধু ব্যাগ বুনে দিই।
সুমাইয়া জানান, কাজটি করতে বেশ ধৈর্য্য লাগে। ধৈর্য্য ধরে কাজ করলে ভালো টাকা আয় হয়। প্রতিদিন কাজ করলে মাসে ছোট বড় মিলিয়ে ৮-১০টা ব্যাগ বানানো যায়। তাঁরা সবাই একসাথে বসে কাজ করেন।
আশুরা বেগম জানান, প্রথম প্রথম স্বামীরা বাধা দিলেও এখন উৎসাহ দেয়। স্বামীর আয়ের পাশাপাশি তিনিও এখন আয় করছেন। এটা ভেবে বেশ ভালো লাগে তাঁর। একটি বড় ব্যাগ তৈরি করতে প্রায় ১০০০ হাত দড়ি লাগে। ব্যাগ বানানো হলে ঋশিল্পী থেকে লোক এসে টাকা দিয়ে ব্যাগ নিয়ে যায়।
গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের এই ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।