প্রাণবৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে অবদান রেখেছে গ্রামীণ নারী
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে গাজী আল ইমরান
একজন নারী দিনে কাজ তাঁর হাজার, তাই তো নারী অলরাউন্ডার”। কাঁক ডাকা ভোরে দু-চোখ মুছতে মুছতে ঘুম ভাঙে একজন নারীর। সকালে উঠে সংসারের নানান কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় গ্রামীণ নারীদের। গৃহস্থালি কাজের মাধ্যমে নারীরা পরিবারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঘরে সবার খাবার তৈরি, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, শিশুদের দেখভাল ও পাঠদান, বিদ্যালয়ে আনা নেওয়াসহ গৃহ ব্যবস্থাপনার নানা কাজ করেন নারীরা। এছাড়া তারা কৃষিকাজ, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন করেন। গৃহস্থালি কাজের নারীর মানবিক অবদানকে কোনোভাবেই অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। গৃহস্থালি কাজের মাধ্যমে নারীরা পারিবারিক ক্ষেত্র ছাড়াও আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছেন। নারীরা সকল রকমের সাংসারিক কাজের মধ্যে একটি কাজ হলো গবাদি পশুগুলোর দেখভাল করা। পুরুষের পাশাপাশি মাঠে ঘাটে কাজ করতে কোনো প্রকার পিছিয়ে নেই তাঁরা। সেটা মাঠ-ঘাট পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়। সবচেয়ে বড় কথা কৃষির সূচনা একজন নারীর হাত দিয়ে। বাড়িতে বিভিন্ন রকম সবজি চাষ, গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। যার মাধ্যমে বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে একটি বাড়ি।
একজন নারী নিজে সকালের খাবার খাওয়ার আগেই বাড়ির গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি গবাদি পশুর খাবারের বিষয়টি আগে দেখেন। গবাদি পশুর বিভিন্ন রোগব্যাধি সারতে প্রাণী সম্পদ অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে আনা নেওয়ার কাজটিও করে থাকেন একজন নারী। নিজের সন্তানের মতো দেখভাল করে থাকেন পশু পাখিগুলোকে। অনেকসময় গবাদি পশুকে কোলে করে নিয়ে যেতে দেখা যায় একজন নারীকে। পরিবারের সদস্যদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে পিছিয়ে নেই নারীরা। হাঁস মুরগির ডিম, বিভিন্ন পশুর মাংসের জোগান দিতে কোনো প্রকার পিছপা হননা নারীরা।
গবাদিপশু পালন গ্রামীণ অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানকারী একটি কাজ। আর এটির জন্য একজন নারীর অবদান সবচেয়ে বেশি। গ্রামের এমন কোন বাড়ি নেই, যাদের দুই- চারটি গরু ছাগল থাকে না, থাকেনা হাঁস মুরগিসহ বিভিন্ন ধরণের গবাদি পশু পাখি। গরু দিয়ে চাষাবাদের পাশাপাশি দুধ ও গরুর বাছুর বিক্রির মাধ্যমে সংসারের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করে। যার ফলে নারীরা পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হচ্ছেন।
গ্রামে একজন নারীর রান্নায় পাওয়া যায় বিভিন্ন রকমের কুড়িয়ে পাওয়া সবজি, যেটি একজন নারী তার বাড়ির চারপাশ কুড়িয়ে খাবার হিসেবে পরিবেশন করে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। যেটির মাধ্যমে নারী তাঁর পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপকভাবে অবদান রেখে চলেছেন। এটি দিয়ে একদিকে যেমন পরিবারের অর্থনীতিতে অবদান রেখেছেন, ঠিক তেমনিভাবে প্রাণবৈচিত্র্যর যথাযোগ্য ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে।
গ্রামীণ বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারীদের এই অবদান অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করলেও এর কোন স্বীকৃতি নেই, নেই তাদের কোনো পৃষ্টপোষকতা! তা না হলে গ্রামীণ নারীর এ অবদান আরো ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হতো, যা দেশের অর্থনীতিকে অনেকদুর এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হতো। অবশেষে গ্রামীণ নারীরা এগিয়ে নিয়ে যাবে এই সমাজকে, টিকিয়ে রাখবে প্রাণবৈচিত্র্য এই কামনা করি।