পানি সংকটে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের ফসল আবাদ ও কর্মপ্রক্রিয়া
রাজশাহী থেকে মো. জাহিদ আলী
বাংলাদেশে ভোগলিকভাবেই একেকটি অঞ্চল একেকটি বৈশিষ্ট সম্পন্ন। ভুমির আকার, মাটির বৈশিষ্ট্য, বৃষ্টিপাত, ফসল উদপাদনের মাত্রা ইত্যাদি গুনাগুণ বিশ্লেষণ করে সরকার বাংলাদেশের কৃষি প্রকৃতিকে ৩০টি কৃষি প্রতিবেশ অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা, তানোর উপজেলার কিছু অংশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও গোমস্তাপুর, নওগার নিয়ামত নিয়ামতপুর অঞ্চলে তীব্র পানির সংকটের কারণে বর্ষা মৌসুমে আমন ধান ছাড়া অন্যকোন ফসল উৎপাদন হতো না। বর্ষা মৌসুমে আমন ধান উৎপাদনও পানির উপর নির্ভর করতো।
আশির দশকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ভুগর্ভস্থ পানির উত্তোলনে ফসল চাষের মাধ্যমে এই অঞ্চলে রবি মৌসুমে ফসল চাষে বিপ্লব ঘটে। সেই সাথে ক্রমাগতভাবে সরকারি উদ্যোগে গাছ লাগানোর মাধ্যমে বরেন্দ্র অঞ্চল ফিরে পেতে থাকে সবুজায়ন এর রূপ। খরা মৌসুমে পতিত জমিগুলো আস্তে আস্তে সেচ সুবিধার আওতায় আসে। কিন্ত ক্রমাগত মাটির নিচে থেকে পানি তোলার কারণে ভুগর্ভস্থ পানির লেয়ার নিচের দিকে নামতে থাকে। এর ফলে হস্তচালিত টিউবওয়েলগুলো আস্তে আস্তে নষ্ট হতে থাকে। পতিত জমিগুলো ফসলের আবাদের আওতায় আনার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেন। খাড়ি সংস্কার পদ্মা নদী থেকে পানি এনে খাড়িতে পানির যোগান দেওয়া, শস্যেও বহুমুখীকরণ ইত্যাদি।
সম্প্রতি ভু-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতের লক্ষ্যে “এক্সটেনশন অব ইরিগেশন ইন বারিন্দ এরিয়া থ্রো কনজারভেশন অব ওয়াটার ইন ক্যানেল” নামে সৌরশক্তি ব্যবহার করে ফসল আবদের জন্য রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় জগপুর বিড়ইলের সরমংলা এবং গোপালপুর ও পলদেবপুর এলাকার ২টি পুকুরে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪টি সৌরশক্তি চালিত এলএমপি পাম্প স্থাপন করা হয়। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পদ্মা নদী থেকে সেচের মাধ্যমে খাড়িতে পানি এনে পানির যোগন নিশ্চিত করবে এই সৌরশক্তি চালিত পাম্প। কিন্তু গতবছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আশানুরূপ না হওয়া পদ্মা নদী থেকে পর্যাপ্ত পানি আনতে না পারার কারণে, ফসল আবাদে জমির সেচ সুবিধার জন্য বৈচিত্রময় ফসল চাষের সিদ্ধান্ত নেয় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে ঘুরে কৃষকের মাধমে জানা যায়, গোদাগাড়ী গ্রোগাম ইউনিয়নের জগপুর খাড়ির অন্তর্গত সৌরশক্তি ব্যবহৃত এলএলপি পাম্পের আওতায় প্রাথমিক অবস্থায় ১৮০ বিঘা চাষাদের আওতায় সেচ শুরু করলেও পানির স্বল্পতায় পাম্পের দক্ষিণ দিকে ধান চাষের জন্য পানি প্রদান করলেও উত্তর দিকে রবি শস্য আবাদের সিদ্ধান্ত নেয় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তথাপি উত্তর দিকের কিছু জমিতে কৃষক নিজ উদ্যোগে ধান চাষ করলে বর্তমানে ধান টিকিয়ে রাখার জন্য পাশ্ববর্তী খাড়ি থেকে ৩টি শ্যালো চালিত সেচের মাধ্যমে জগপুর খাড়িতে পানি নিয়ে আসে।
এ সম্পর্কে জগপুর এলাকার আব্দুর রহমান বলেন, “বিএমডিএ অফিস থেকে এবছর উত্তর দিকের জমিতে গম, মুসর, সরিষা আবাদ করতে বলে আমি তিন বিঘা জমিতে গম আবাদ করি।” তিনি জানান, আগামীবছর এই জমিতে ধান আবাদ হবে এবং দক্ষিণ দিকে রবি শস্য আবাদ হবে বলে জানায় বিএমডিএ । তিনি আর জানান, এই ডিপের আওতায় ধান করতে নিষেধ করেছিল কিন্তু কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে ধান আবাদ করছে এখন তাদের ধান টিকিয়ে রাখতে পাশ্ববর্তী খাড়ি থেকে পানি সেচের মাধ্যমে এই পাম্পে আনার পর তা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।
আর একজন কৃষানী সীমা বেগম বলেন, “ডিপের পানি না পাবার জন্য আমাদের এ বিঘা জমিতে এই বছর মসুর চাষ করেছি আগামী বছর পানি পেলে ধান চাষ করতে পারব।”
এলাকার মানুষ বর্তমানে পানির এই সমস্যার জন্য, বৃষ্টির পানি কম হওয়া, খাল, খৈড়া, পুকুরের মত পানির উৎসে কম সময়ের জন্য পানি থাকা, অপরিকল্পিত পানি ব্যবস্থাপনা, ভুপরিস্থ পানির উৎসগুলোর সংস্কার না করা ও বৈচিত্র্যময় ফসলের চাষ না করার কারণগুলোকে চিহিৃত করেন। তারা উপরোক্ত বিষয়গুলোকে জরুরি ভিত্তিতে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার জন্য সংশিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের কাজ করার আহবান জানান।