জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবেলায় সক্ষম স্থানীয় জাতের ধান
:: নিউজ ডেস্ক
বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক ও সিসিডিবি’র উদ্যোগে আজ ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ রামেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনায়তন, ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন, ধানমন্ডি, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ‘জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলায় স্থানীয় ধানের অবদান’ শিরোনামে জাতীয় সংলাপ। সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস। এছাড়া আমন্ত্রিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উবিনীগ’র নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, কৃষিবিজ্ঞানী ড. গুল হোসেন এবং বারি’র উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক অফিসার ড. খুরশিদ আলম।
সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত এ্ই জাতীয় সংলাপের প্রথম পর্বে গবেষণার প্রেক্ষাপট উত্থাপন করেন সিসিডিবি’র মো. কামরুজ্জামান। পরবর্তীতে বারসিক’র পাভেল পার্থ বিস্তারিত গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। গবেষণাপত্রে, স্থানীয় জাতের ধানের সাথে মানুষের জীবন, সংস্কৃতি ও জীবিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযুক্ততা ও সম্পর্কে কথা তুলে ধরা হয়। গবেষণাপত্র উত্থাপনের পর আমন্ত্রিত আলোচকগণ স্থানীয় প্রজাতির ধান সংরক্ষণ এবং এগুলোর আবাদের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। তাদের ভাষ্যমতে, বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তন পরিস্থিতিতে অনেক স্থানীয় জাতের ধান আছে যেগুলো বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষম। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে, পুস্তকি জ্ঞানের সাথে কৃষকদের লোকায়ত জ্ঞানের সমন্বয় করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “পরিবর্তনকে গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে আমাদের। একদিকে যেমন ফলন বৃদ্ধির জন্য গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে তেমনিভাবে কৃষককের স্থানীয় জাতের ধানগুলোকে সংরক্ষণ করে এর ভালো বৈশিষ্ট্যগুলোকে পরস্পরের সাথে সংকরায়ন করে নতুন সক্ষম প্রজাতি উদ্ভাবন করতে হবে।” স্থানীয় জাতের ধানগুলো সংরক্ষণের প্রচেষ্টা সরকার করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত কৃষক ও প্রজননবিদদের আহ্বান জানান তাঁরা যেন স্থানীয় জাতের ধানগুলো সংরক্ষণ করেন। তিনি বলেন, “আপনারা যখন দুর্যোগ সহনশীল কোন স্থানীয় জাতের ধান সন্ধান বা উদ্ভাবন করেন তখন চেষ্টা করেন আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখার, যাতে আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে পারি। কারণ এসব স্থানীয় জাতের ধানগুলো হচ্ছে আমাদের দেশের সম্পদ।”
জাতীয় সংলাপের দ্বিতীয় পর্বে বাংলাদেশ বিভিন্ন কৃষিপ্রতিবেশ অঞ্চল তথা বরেদ্র, চর, উপকূলীয়, হাওর এবং বন্যাপ্রবণ অঞ্চল থেকে আগত কৃষাণ-কৃষাণীরা স্থানীয় ধান আবাদের তাদের বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। বর্তমান জলবায়ু দুর্যোগে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তথা বন্যা, জলাবদ্ধতা, খরা,
লবণাক্ততা পরিস্থিতির মাঝেও কীভাবে তারা তাদের লোকায়ত জ্ঞান প্রয়োগ করে স্থানীয় প্রজাতির ধান আবাদ করে সফল হয়েছেন জাতীয় সংলাপে তা তুলে ধরেন। সাতক্ষীরা থেকে আগত কৃষাণী ফরিদা পারভীন, বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে কৃষক মো. ই্উসুফ মোল্লা, মানিকগঞ্জ কৃষাণী কমলা বেগম, গাইবান্ধা থেকে কৃষক মানিক মিয়া, হাওর অঞ্চল থেকে চুরাক ধানের উদ্ভাবক নুয়াজ আলী ফকির সবাই স্থানীয় প্রজাতির ধান নিয়ে তাদের আবাদের সফলতার কথা তুলে ধরেন। তারা জানান, জলবায়ু দুর্যোগে যখন উচ্চফলনশীল বা হাইব্রিড জাতের ধান সম্পূর্ণ ব্যর্থ তখন এসব স্থানীয় ধানগুলো জলবায়ু দুর্যোগের মাঝেও ভালো ফলন দেয়। এসব স্থানীয় ধানগুলো আবাদের পোকামকড়ের আক্রমণ যেমন কম হয় তেমনিভাবে উৎপাদন খরচও বেশি না। এছাড়া তাদের ভাষ্যমতে, কোন কোন স্থানীয় প্রজাতির ধান প্রচলিত উচ্চফলনশীল ধানের চেয়েও বেশি ফলন দেয়।
কৃষক, বিজ্ঞানী, সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, গবেষকদের পাশাপাশি শিক্ষার্থী, উন্নয়নবিদ, গণমাধ্যকর্মী এবং পরিবেশকর্মীদের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ঘটে সংলাপ অনুষ্ঠানে। দেশের বিভিন্ন অংঞ্চল থেকে আসা কৃষকেরা উপস্থিত সকলের মাঝে তাদের উৎপাদিত কালারাই, মাগুরশাইল ও দাদখানি ধানের চাল শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে উপহার দেন।