কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই বোরো ধানের আবাদ
ভাঙ্গুড়া(পাবনা) থেকে মো. মনিরুজ্জামান ফারুক
কীটনাশক ব্যবহারে ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোকার সাথে সাথে উপকারী পোকাও মারা যায়। এতে উপকারের চেয়ে জমির ক্ষতির পরিমাণটাই বেশি হয়। তাই কীটনাশক ছাড়া ক্ষতিকর পোকার হাত থেকে ধান ক্ষেতকে রক্ষা করতে পারচিং পদ্ধতিতে বোরো আবাদ শুরু করেছেন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার কৃষকেরা। জানা গেছে, বিগত কয়েক বছর কিছু জমিতে এ পদ্ধতি ব্যবহারে সাফল্য পাবার পর এদিকে ঝুঁকছেন এলাকার কৃষকেরা। এ পদ্ধতি ব্যবহারে যেমন জমির ক্ষতি হয় না তেমনি অতিরিক্ত খরচ থেকেও বাঁচা যায়।
পারচিং পদ্ধতি হলো ধানের জমিতে কীটনাশক ব্যবহার না করে বাঁশের কঞ্চি বা গাছের ডালপালা জমিতে পুঁতে পাখি বসানোর ব্যবস্থা করা। যেন ডালে পাখি বসে ধান গাছের উপর থাকা ক্ষতিকারক মাজরা পোকার মথ দেখে তা খেয়ে ফেলে। এতে ক্ষেতের মধ্যে মাজরা পোকা বংশ বিস্তার করতে পারে না। ফলে ফসলের ক্ষেতটি ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে রেহাই পায় এবং উপকারী পোকা সহজেই বংশবিস্তার করতে পারে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নের ৬ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। আর কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই বোরো আবাদের লক্ষ্য নিয়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠে নেমেছেন স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তরা। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে উপজেলার মাঠে মাঠে চলছে এখন পারচিং উৎসব। কৃষি কর্মকর্তারা এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বোরো আবাদে কৃষকদের নানা সহযোগিতা দিয়ে চলেছেন।
গত বৃহস্পতিবার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে উপজেলার ভেড়ামারা ব্লকের হাটগ্রাম মাঠে পারচিং উৎসবের আয়োজন করা হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ সময় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ ও স্থানীয় কৃষকেরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে উপজেলার ভেড়ামারা ব্লকের ৫৪০ হেক্টর বোরো ক্ষেতের মধ্যে ৫০ ভাগ জমিতে পারচিং এর আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। ওই ব্লকের হাটগ্রামের কৃষক আসাদুজ্জামান জানান, তিনি কীটনাশক ব্যবহার ছাড়াই কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে পারচিং পদ্ধতিতে ২ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। একই গ্রামের কৃষক আসাদুল হক, তিনিও ২ একর জমিতে পারচিং পদ্ধতিতে আবাদ করেছেন। ভেড়ামারা গ্রামের কৃষক মুকুল হোসেন, তিনি কীটনাশক ছাড়াই এক একর জমিতে এ পদ্ধতিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। এ ব্যাপারে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুস্থির কুমার সরকার বলেন, “বিগত বছরগুলোতে সাফল্য পাওয়ায় কীটনাশক ব্যবহার না করে পারচিং পদ্ধতিতে ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে।”