মাশরুম নিয়ে আসমা-শারমীনদের স্বপ্নযাত্রা শুরু

চাটমোহর, পাবনা থেকে ইকবাল কবীর রনজু

ব্যাঙের ছাতার মতো ছত্রাক জাতীয় গাছ মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন খনিজ পদার্থ ও প্রোটিন থাকে। দেহের ক্ষয় পূরণ, হাড়ের গঠন, দাঁতকে মজবুত করতে, রক্তহীনতা রোধ করতে, ক্যান্সার ও হৃদ রোগ প্রতিরোধ করতে এবং সর্বোপরি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে মাশরুম। রক্তের সুগারের সমতা রক্ষা করে বলে; বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য মাশরুম অত্যন্ত উপকারী। আমাদের দেশে সূর্যের আলোয় প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া খাবার উপযোগি মাশরুম বেশি পাওয়া যায় না। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কিছু মাশরুম বিষাক্ত হয়। এগুলো খাওয়া বিপদজনক। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাশরুম চাষ করে পরিবারের পুষ্টির যোগানের পাশাপাশি বাড়তি আয়ও করা যায়। বর্তমান ঢাকা চট্রগ্রাম টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অয়েষ্টার মাশরুম, স্ট্র মাশরুম ও ইয়ার মাশরুম এর চাষ হচ্ছে। দিন দিন এর ক্ষেত্র প্রসারিত হচ্ছে। আমাদের দেশে উৎপাদিত মাশরুম দেশের বড় বড় হোটেল রেস্তোরায় বিক্রি হচ্ছে। বিশেষত সবজি হিসেবে এবং শুকিয়ে ডাষ্ট করে এ দুইভাবে মাশরুম খাওয়া যায়।

mashrum-

মাশরুমের উপকারিতার কথা বিবেচনা করে এর প্রসারে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। চাটমোহরেও শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম। ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলোজী প্রোগ্রাম (N.A.T.P) এর আওতায় কমন ইন্টারেষ্ট গ্রুপ (C.I.G) সদস্য/সদস্যাদের মাধ্যমে চাটমোহর উপজেলা কৃষি অফিস মাশরুম উৎপাদন প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করছে। চাটমোহর উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান রশীদ হোসাইনী বলেন, “আমরা চাটমোহর কৃষি অফিসের মাধ্যমে এ প্রকল্পের আওতায় খরিপ-২ মৌসুমে বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৩ জন সিআইজি সদস্যের মাধ্যমে ১৩ শত মাশরুমের প্যাকেট স্থাপনের কাজ করছি। পাঁচটি প্রদর্শনীতে ৫শ প্যাকেট স্থাপন করা হয়েছে। আরো আট টিতে ৮শ’ প্যাকেট স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যে স্থাপনকৃত অনেক প্যাকেট থেকে চারা গজিয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে মাশরুম সংগ্রহ করতে পারব আশা করছি।”

mashrum-1

চাটমোহরের গুনাইগাছা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইদ্রিস আলীর তত্বাবধানে মাশরুম চাষ শুরু করেছেন জাবরকোল গ্রামের ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেনের স্ত্রী সিআইজি সদস্যা আসমা খাতুন। আসমা বলেন, “মাশরুম চাষ করে লাভবান হওয়া যায় এটা জানতাম না। ইদ্রিস আলী স্যারের কাছে এ বিষয়ে জানতে পেরে নিজ বাড়িতে মাশরুম চাষ শুরু করেছি। স্যার সব সময় সহায়তা করছেন। গত বুধবার বাঁশের র‌্যাকে (তাকে) ১শ’ মাশরুমের প্যাকেট স্থাপন করেছি। পাঁচ দিন যেতে না যেতেই মাশরুমের গাছ বেরুনো শুরু করেছে। আমি আলো মুক্ত ঘরের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছি। প্রতিদিন চার পাঁচবার পানি দিচ্ছি।”

তিনি আরো বলেন, “বড় ছেলে সাব্বির চাটমোহর পাইলট স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়া লেখা করছে। ছোট ছেলে সনেট শালিখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে। সংসারে অনেক খরচ। তাই মনে স্বপ্ন নিয়ে চেষ্টা করছি নিজে কিছু করার। এখন সীমিত আকারে মাশরুম চাষ শুরু করলাম। যদি লাভ করতে পারি তবে বৃহৎ আকারে মাশরুমের খামার করার ইচ্ছা আছে। পরিবারকে সহায়তা করার ইচ্ছা থেকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে মাশরুম চাষের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছি।”

mashrum-2

গত ২৮ জুলাই আসমার মাশরুম খামারের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ কালে উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা ইদ্রিস আলী বলেন, “গত ২৫ জুলাই বুধবার আসমার বাড়ির একটি অব্যবহৃত ঘরে বাঁশের তাকে মাশরুমের ১শ’ প্যাকেট স্থাপন করি। চার দিনেই প্যাকেটগুলো থেকে উঁকি মারছে চারা গাছ। আসমাকে মাশরুম চাষের সহায়ক উপকরণও দেয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে প্রতি প্যাকেট থেকে তিনবার মাশরুম সংগ্রহ করা যাবে। এক একটি স্পন থেকে ১৫ দিনে ২শ’ থেকে ৪শ’ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যাবে আশা করছি। ডাষ্ট করলে মাসে প্রতি প্যকেট থেকে মাসে ১শ’ গ্রাম হিসেবে ১শ’ প্যাকেট থেকে ১০ কেজি মাশরুম ডাষ্ট পাওয়া যাবে যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩০ হাজার টাকা। চাটমোহর বা এর পাশর্^বর্তী কোন হর্টিকালচার সেন্টারে মাশরুম ল্যাব না থাকায় সাভার মাশরুম উন্নয়ন সেন্টার থেকে প্রস্ততকৃত স্পন আনতে হচ্ছে আমাদের। বর্তমান বড় বড় শহরগুলোর হোটেল রেস্তোরায় ৩শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে মাশরুম। শুকিয়ে ডাষ্ট করলে প্রতি কেজি মাশরুম তিন থেকে চার হাজার টাকা বিক্রি করা যেতে পারে।”

mashrum-3

পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী সিআইজি সদস্যা ও মাশরুম চাষী শারমিন আক্তার জানান, “একটি স্বপ্ন নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করলাম। স্বপ্ন তো সত্যিও হয়। আমার স্বামী সেনাবাহিনীর একজন পোষাক সাপ্লাইয়ার ছিলেন। এখন এলাকায় সার বীজের দোকান দিয়েছেন। আমার মেয়ে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীতে এবং ছেলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়া লেখা করছে। বাড়ছে সংসার খরচ। তাই বাড়তি আয়ের আশায় মাশরুম চাষ শুরু করা।”

happy wheels 2

Comments