প্রতিবন্ধী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে আমার সংগ্রাম
সত্যরঞ্জন সাহা হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ
‘জীবন একটাই, জীবনকে ভালোবেসে বেঁচে আছি। আমি ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষ করে, বাবার সাথে কৃষি কাজে যুক্ত হই। জীবন সংগ্রামে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য ২৫ বছর বয়সে কৃষি কাজের পাশাপাশি ট্রাক্টর/টিলার ক্রয় করে জমি চাষ করতে থাকি। একদিন জমি চাষ করতে গিয়ে ট্রাক্টর/টিলারে পানি দিতে গিয়ে হঠাৎ ট্রাক্টর ব্রেক ফেল করে পায়ের উপর উঠে যায়। টিলারে নিচে পা চলে যায়, আমাকে প্রায় মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। মানুষের সহযোগিতায় চিকিৎসা করে নিজের জীবন বেঁচে গেলেও হারাতে হয় ডান পা। আমার এক পা না থাকলেও আমি ভালোভাবেই বেঁচে আছি।’ কথাগুলো বলেছেন হরিরামপুর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আব্দুল করিম (৫৫)।
আব্দুল করিম আরও বলেন, ‘সকল মানুষের মধ্যে আমি ভিন্ন, আমার পা নাই, আবার মানুষদের মধ্যে আমার বৈচিত্র্য আছে। এই ভিন্ন বৈচিত্র্যের মানুষদের নিয়ে বা ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে ২০১২ সালে হরিরামপুর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংগঠন করি। সংগঠন পরিচালনার পাশাপাশি সংসার চালানোর জন্য বেছে নেই সাইকেল রিক্সা ঠিক করার কাজ। সাইকেল রিক্সা ঠিক করার কাজ শিখে, সাইকেল রিক্সা ঠিক করে আমার সংসার চলে। আমি এই কাজ করে আমার পরিবার নিয়ে বেঁচে আছি।’ তিনি বলেন, ‘এই সংগঠনের মাধ্যমে সমাজে ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের সন্মান বৃদ্ধির জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে থাকি। ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের সচেতনতা সৃষ্টি ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সমাজে ভিন্নভাবে মানুষদের সন্মান বৃদ্ধির জন্য সিআরপি ও বারসিক, সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ কাজ করে সহযোগিতা করে আসছে। সকলে মিলে হরিরামপুরে ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে হরিরামপুরের প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ শক্তিশালী হয়ে উঠছে।’
তিনি জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জনসচেতনতা সৃষ্টিতে বিভিন্ন দিবস উদযাপন ও সমাজে সন্মান বৃদ্ধিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে গাছ বিতরণ, স্বাস্থ্য ক্যাম্পে চিকিৎসা করে সহযোগিতা করে। কিন্তু হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদকে ঘর তৈরি করার জন্য জায়গা দিয়ে ও মাননীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম সংগঠনের ঘর তৈরি ও প্রতিবন্ধীদের আর্থিক সহযোগিতা ও প্রতিবন্ধীদের চলাফেরা, টাই সাইকেল, হুইল চেয়ার, ক্যারেজ, কানের হেয়ারিংসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দিয়ে ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সামাজিকরণে সহযোগিতা করে আসছে।
হরিরামপুর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের ৫২৫ জন সদস্য নিয়ে ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করে আসলেও সমাজ ও পরিবারে রয়েছে প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রতি বৈষম্য ও বঞ্চনা। ভিন্নভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের সমাজ ও পরিবারের সকল মানুষদের সচেতনতা সৃষ্টি মাধ্যমে সামাজিকীরণ ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ এবং সরকারে বিশেষ উদ্যোগে কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।