শেখার কোনো বয়স নেই
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
নতুন কিছু শেখা বা জানার কোনো বয়স নেই। আগ্রহটাই হলো আসল। মন থেকে যদি ভালোলাগা থাকে তবে যে কোনো বয়সেই নতুন নতুন বিষয় শেখা যায়। শেখার সেই চর্চাটাকে কাজে লাগিয়ে অন্যদের কাছে অনুকরণীয় জয়ে উঠা যায়। আমাদের দেশের কুটির শিল্প’র ভিত গড়ে উঠেছে গ্রামের কুটিরে। সাংসারিক কাজের পর অবসর সময়টুকুকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশের নারীগণ তাঁদের সৃষ্টিশীলতাকে প্রকাশ করেছেন নানা কাজের ভেতর দিয়ে। এবং তাঁদের এই নিপূণ হাতের বিশ্ব দরবারে কাজ হয়ে উঠেছে অমূল্য ও সমাদৃত।
লক্ষ্মীগঞ্জ ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামের একজন প্রবীণ নারী পরিষ্কারের মা। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিল ১৪ বছর। এ সময় তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর একে একে তিন ছেলের জন্ম হয়। ছোট ছেলের বয়স যখন মাত্র ৩ বছর, তখন তাঁর স্বামী মারা যান। এরপর অনেক কষ্ট করে ছেলেদের বড় করেছেন। বর্তমানে ছেলেরা বিয়ে করে আলাদা সংসার করেছেন। কিন্তু তিনি এখন নিঃসঙ্গ। নাতি নাতনীদের নিয়ে সময় কাটান। অবসর সময় যেন কিছুতেই কাটতে চায় না।
তাঁর প্রতিবেশিদের মধ্যে অনেকেই অব্যবহৃত উপকরণ যেমন ছোট প্লাস্টিক বোতলের ঢাকনা, পাটখড়ি ইত্যাদি দিয়ে ঘর সাজানোর বিভিন্ন শোপিস বা ঝাড় বাতি তৈরি করেন। পরিষ্কারের মা তাদের কাছে বসে থেকে এই কাজ শিখে নিয়েছেন। নিত্যদিনের কাজ শেষ করে তিনি আপন মনে এ সমস্ত উপকরণ দিয়ে তৈরি করেন নিজের ঘরে টানানোর জন্য ঝাড়বাতি।
নিজের বাড়িতে এক সাথে এত বোতলের ঢাকনা পাওয়া যাবেনা। তাই তাঁর ছোট্ট নাতি সারা গ্রামে ঘুরে ঘুরে রাস্তায় বা কারো বিড়ির আঙিনায় ফেলে রাখা পেপসি বা অন্যান্য বোতলের ঢাকনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসে। পরিষ্কারের মা প্রথমে ঢাকনাগুলোকে দা বা বটির সাহায্যে ছোট ছোট করে ফালি করেন। তারপর সুতা দিয়ে পাটখড়ি আর কেটে রাখা ঢাকনাগুলো একটার পর একটা লাগিয়ে তৈরি করে ফেলেন ঝাড়বাতি।
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে অনেক সময় চোখ জ্বালা করে। তবুও তিনি আগ্রহের জোড়ে এই কাজ করেন। সবচে’ সময় বেশি লাগে ঢাকনাগুলো কাটতে। ঢাকনা কেটে, জমা করে তারপর তিনি এগুলো জোড়া দেন। বোতলের ঢাকনার ঝাড়বাতি তিনি শুধু নিজের জন্যেই তৈরি করেন। তবে কেউ কিনে নিতে চাইলে বিক্রিও করবেন বলে জানান। বয়সে প্রবীণ হলেও কাজের প্রতি তাঁর আগ্রহের কমতি নেই। সারাদিনের মধ্যে এতটুকু সময়ও তিনি নষ্ট করতে চান না। আগ্রহ আর শখের বশে তিনি বয়সকে বাঁধা মনে করেন না। যে কোনো বয়সেই যে কোনো কাজ করা যায়। গ্রামের অনেকেই তাঁর এই নিখুঁত কাজের প্রশংসা করেন।