আমরাই আনবো সমতা
মানিকগঞ্জ থেকে রাশেদা আক্তার
‘সবাই মিলে ভাবো; নতুন কিছু করো, নারী-পুরুষ সমতায় নতুন বিশ্ব গড়ো’ প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গত ৭ মার্চ নারীদের অংশগ্রহণে ফুটবল খেলা, সাইকেল র্যালি ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। মত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের আয়োজনে এবং বারসিক’র সহযোগিতায় ফুটবল খেলা ও সাইকেল র্যালিতে মত্ত উচ্চ বিদ্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন সরদার।
বেলা ১১.০০ টায় ফুটবল খেলা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় ১-০ গোলে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়কে হারিয়ে মত্ত উচ্চ বিদ্যালয় জয়লাভ করে। খেলা শেষে কিশোরীদের অংশগ্রহণে সাইকেল চালানো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সাইকেল চালানো প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান অধিকার করে মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রানী আক্তার, ২য় স্থান অধিকার করে শিউলী আক্তার এবং ৩য় স্থান অধিকার করে মত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জয়নব আক্তার।
অনুষ্ঠানের আলোচনায় প্রধান অতিথি মামুন সরদার বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতন আর বৈষম্যের শিকার হতো। এখন তার চিত্র পাল্টে গেছে। এখন নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছেন। আমাদের প্রধান মন্ত্রী একজন নারী। স্পীকার একজন নারী। নারীরা আজ আর পিছিয়ে নেই। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজকের এই আয়োজন সত্যিই যুগোপযোগি একটি আয়োজন। এমন সময় এমন একটি আয়োজন করার জন্য বারসিককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে দুই দলের জন্যই প্রয়োজনীয় খেলার সামগ্রী প্রদান করা হবে আমার পক্ষ থেকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকেরা চাহিদার একটি তালিকা তৈরি করে আমাকে পাঠাবেন আমি তা দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। আর একটি কথা কেউ যদি বাল্য বিবাহের খবর পান তাহলে আমাকে জানাবেন। আমি বাল্য বিবাহ বন্ধের উদ্যোগ নেব।’
বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় বলেন, ‘৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আমাদের আজকের এই আয়োজন। আমরা চাই নারীরা সামনে এগিয়ে যাক। বাল্য বিবাহ বন্ধ হোক। আজকে সাইকেল চালানো প্রতিযোগিতা হলো। তোমাদের সবাইকে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে হবে। সমাজের বাধা, প্রতিবন্ধকতাকে ভাঙতে হবে। কেউ বাল্য বিবাহ করবে না। কারো বাল্য বিবাহের খবর পেলে ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করবে। আমরা মনে করছি এখন কোন খেলাই আর নারীর খেলা, পুরুষের খেলা নাই। সব খেলাই সবাই খেলতে পারে। তার জন্যই এই আয়োজন।’
মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আজকের এই আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এমন আয়োজনের মধ্য দিয়েই নারীরা সামনে এগিয়ে যাবেন।’ মত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাল মিয়া বলেন, ‘আজকের দিনে এমন একটি আয়োজন করার জন্য বারসিককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এমন আয়োজনের মধ্য দিয়েই নারীরা সচেতন হবেন। সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন। আমরা চাই নারীরাও পুরুষের পাশাপাশি সমানভাবে সামনে এগিয়ে যাক।’
আলোচনা শেষে বিজয়ী দল ও রানার্সআপ দলের মধ্যে ট্রফি প্রদান করা হয়। এছাড়াও সাইকেল চালানো প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার প্রদান করা হয়।
নারীরা সব কিছুই করতে পারেন তার নজির আমরা বারবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেয়েছি। আজ আবার কিশোরীরা তা প্রমাণ করলো। এই কিশোরীরা আমাদের আগামী দিনগুলোয় দেশের জন্য আরও মঙ্গল ও খ্যাতি বয়ে আনবে একদিন। নারী দিবসে আসুন আমরা সবাই মিলে এই কিশোরীদের, নারীদের চলার পথকে সুগম করি, তার সফলতা আনয়নে উৎসাহ প্রদান করি, উদ্দীপনা তৈরিতে সহযোগিতা করি।