নান্দনিক বাগানের মুগ্ধতায়
পাবনা থেকে শাহীন রহমান
তাহসীন বেগম অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন এবং প্রসূতিরোগ বিশেষজ্ঞ। তার স্বামী মনোয়ারুল আজীজ দন্ত বিশেষজ্ঞ। স্বনামে খ্যাত এই চিকিৎসক দম্পতির কাছে রোজ সেবা নিতে আসেন অসংখ্য রোগী। অন্যান্য হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসক চেম্বার থেকে এখানে তাদের অভিজ্ঞতা অনেকটাই ভিন্ন।
কেননা, সচরাচর দেখে আসা রসকষহীন হাসপাতালের মত নয়, বরং প্রকৃতির কোলে স্নিগ্ধ পরিবেশে সেবা দানের ব্যতিক্রম পরিবেশ নজর কাড়ে সবার। চিকিৎসকের সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষার প্রহর নির্বিঘ্নে কেটে যায় প্রকৃতির ছোঁয়ায়, নান্দনিক বাগানের মুগ্ধতায়। কেউ আগ্রহী হন শৌখিন বাগান তৈরিতেও। চিকিৎসকের কাছ থেকে সেবার পাশাপাশি নিয়ে যান পছন্দের গাছের চারাও।
এভাবেই প্রাত্যহিক জীবনের কর্মব্যস্ততার মাঝেও ছাদ কৃষি আর শৌখিন বাগানে পাবনায় সাড়া ফেলেছেন ডা. তাহসীন বেগম ও ডা. মনোয়ারুল আজীজ দম্পতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহুরে জীবনে কেবল মনের খোরাক নয়, পরিবেশ রক্ষায় এমন বাগান এখন সময়ের দাবি।
পাবনা শহরের দিলালপুরের ছিমছাম নিরিবিলি দোতলা বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন তাহসীন বেগম ও মনোয়ারুল আজিজ দম্পতি। চারপাশে সবুজ লতাপাতায় ঘেরা দেয়াল, উঠোন বারান্দা, আর বিশাল ছাদের নানা রঙের ফুলের সমারোহ দেখে বাড়িটিকে যে কেউ শ্যুটিং স্পট কিংবা অবকাশ কেন্দ্র ভেবে ভুল করলেও খুব একটা দোষের হবে না। ঘোর কাটিয়ে ভালো করে নজর দিলে চোখে পড়বে চিকিৎসক দম্পতির বাসভবন ও চেম্বারের সাইনবোর্ড।
ডা. তাহসীন বেগম জানান, বাবার মৃত্যুর পর, তার রেখে যাওয়া গাছ নাড়াচারা করতেই বাগান করার নেশায় পড়েন। চাকরি জীবনের বিভিন্ন সময় দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেছেন গাছ। আস্তে আস্তে বাড়ির উঠোন, ঘর, ছাদ সর্বত্রই চলে যায় গাছের দখলে। প্রতিদিনের দৈনন্দিন কাজের মাঝে এ গাছ গুলো হয়ে ওঠে তার জীবনেরই অংশ।
তাহসীন বেগম আরো জানান, বর্তমানে তার বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ, সূর্যমূখী, ডালিয়া, পিটুনিয়া, অর্কিড, গন্ধরাজ, জুঁই, হাসনাহেনা, আম, লেবু, পেয়ারা, পামসহ সহস্রাধিক ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে। আছে নানা ধরণের বাহারি সৌন্দর্যবর্ধক লতা, গুল্ম, পাতাবাহার আর ক্যাকটাসের সমারোহ।
স্ত্রীর কাজে সহযোগীতা করেন ডা. মনোয়ার উল আজীজও। সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের মনের খোরাক যোগায় এ বাগান। স্বজন, প্রতিবেশীরাও অনুপ্রাণিত হন বাগান তৈরিতে। তাহসীন ও মনোয়ার দম্পতির দীর্ঘদিনের বন্ধু ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী রাজু বলেন, ‘প্রতিটি ঋতুতে নতুন রূপে সাজে তাহসীনের বাগান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্যও ওদের বাড়িতে ছুটে আসি। বর্ণিল রঙের ফুল আর লতাপাতায় মাঝে মাঝে মনে হয় এ যেন বাড়ি নয়, নিসর্গপুরী।’
ডা. মনোয়ারুল আজীজ বলেন, ‘বাগান করতে সময় ব্যস্ততা কোন অজুহাত নয়। ইচ্ছা করলেই সারাদিনে কিছু সময় বের করে নেয়া যায়। প্রতিটি বাড়িতে যেটুকু জায়গা আছে সেখানেই বাগান গড়ে তুললে গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া রোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ী পাবনার উপপরিচালক আজাহার আলী জানান, শিল্পায়নের কারণে কৃষিজমি কমে যাওয়ায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ছাদ কৃষি ও শৌখিন বাগান বৈশি^ক উষ্ণতা প্রতিরোধের পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় যোগ করে মৌসুমী তাজা ফল। নাগরিক জীবনের ক্লান্তি আর একঘেঁয়েমির দূর করতে নিজ বাড়িতে নিসর্গ গড়া কঠিন কিছু নয়, তার প্রমাণ ডা. তাহসীন ও মনোয়ার দম্পতি।